বেতুকান্দি স্লুইস গেটের কাজের অনিয়ম, সিবিআই তদন্ত চাইল বিডিএফ

বরাক তরঙ্গ, ৩ জুন : বেতুকান্দি সহ বাঁধের ১৮ টি জায়গা দিয়ে জল ঢোকার ফলে ২০২২ এ প্রলংয়করী বন্যার মুখে পড়ে সর্বসান্ত হয়েছিলেন শহর শিলচরের মানুষ। কিন্তু এরপরও গত দু’বছরে সমস্যা নিরসনে সরকারি প্রয়াস যে আশাব্যঞ্জক নয়,দুদিনের অতিবৃষ্টিতেই তার প্রমান মিলল। এনিয়ে জলসম্পদ বিভাগ এবং সরকারের বিরুদ্ধে সরব হল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।

এদিন শিমুলতলায় বানভাসিদের খবর নিতে গিয়ে বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, গত বন্যার জন্য বেথুকান্দি স্লুইস গেট সম্পুর্ণত দায়ী না হলেই এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও জলসম্পদ মন্ত্রী বন্যা শেষ হওয়ার পরই তোড়জোড় শুরু করেন,স্লুইস গেট মেরামতের জন্য তড়িঘড়ি ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করে গৌহাটির এক ঠিকাদারকে কাজের বরাত দেওয়া হয়। এরপর গতবছর এই কাজ সমাপ্তির ঘোষণা করে শিলচরের বিধায়ক ও সাংসদ ফুলমালা চড়িয়ে এই স্লুইস গেটের উদ্বোধনও করেন। এরপর আবার ‘ডাবল শাটার’ লাগানোর জন্য জলসম্পদ মন্ত্রী আরো ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। কিন্তু এবারে নদীর জলস্তর যখন তড়িৎগতিতে বাড়ছিল তখন শতচেষ্টা করেও এই স্লুইস গেটের শাটার বন্ধ করতে পারেননি বিভাগীয় কর্মীরা। অবশেষে সারা রাত জেগে লোহার বাক্স বানিয়ে জিও ব্যাগ দিয়ে জল আটকাতে হয়েছে। জলসম্পদ মন্ত্রী শিলচর এলেও একবারের জন্যও বেথুকান্দি যাননি। উল্টে ঘোষণা করেছেন যে এই স্লুইসগেটের কাজ শেষ হতে নাকি আরো একবছর লাগবে। জয়দীপ বলেন সমগ্র ঘটনাক্রম দেখে আমাদের মনে হচ্ছে এর পেছনে কারুর স্বার্থ নিহিত রয়েছে এবং এটিকে সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো ব্যাবহার করার মতলব চলছে। নির্মানে যত বেশি সময় যাবে ততই সরকারি বরাদ্দ বাড়বে এবং তাতে সংশ্লিষ্টদের উদরপূর্তির সুযোগ বাড়বে। জয়দীপ বলেন, অন্যথা যেখানে অতি অল্প সময়সীমায় দেশে বড় বড় নির্মাণ কার্য শেষ হচ্ছে  সেখানে একটি সামান্য স্লুইস গেট নির্মাণ করতে তিন বছর সময় লাগছে,এটি মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।বিশেষতঃ যার উপর শিলচরবাসীর ভাগ্য নির্ভরশীল তেমন একটি প্রকল্পের নির্মাণ কার্য নিয়ে এই ধরনের দায়িত্ব হীনতা ও অবিবেচক জটিলতা কোন অবস্থায় মেনে নেওয়া যায়না। তারা তাই অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সংস্থা দ্বারা পুরো ঘটনার তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। এবং যাদের গাফিলতিতে এবার শাটার নামানো যায়নি তাদের কঠোর শাস্তিরও দাবি জানাচ্ছেন।

বেতুকান্দি স্লুইস গেটের কাজের অনিয়ম, সিবিআই তদন্ত চাইল বিডিএফ

জয়দীপ এদিন বলেন, বেথুকান্দি ছাড়াও বেরেঙ্গা খাস, ওয়াটার ওয়ার্কস রোড, তারাপুর শিববাড়ি ইত্যাদি অঞ্চলের বাঁধ তথা স্লুইসগেটের গত দুবছরে সংস্কার হয়নি। এছাড়া রাঙ্গির খাল,শিঙ্গির খাল, বাছাই খাল সহ শহরের সব খালগুলিরও সংস্কার অধরা । তিনি বলেন যে তাঁরা আগেও বলেছেন যে উপর থেকে বর্জ্যপদার্থ তুলে কোন লাভ হবে না। এক্সকেভেটর নামিয়ে এই খালগুলির ‘আদি গভীরতা’ অব্দি বর্জ্য নিস্কাশন করতে হবে, কারণ ক্রমাগত বর্জ্য জমে এগুলোর পাদদেশ ভরাট হয়ে পড়েছে। এই ব্যাপারে অবিলম্বে নাগরিকদের নিয়ে আলোচনায় বসুক সরকার। খালের যেসব জায়গায় জবরদখল হয়েছে ম্যাপ নিয়ে তা সনাক্ত করা ও জবরদখল মুক্ত করা হোক। জয়দীপ বলেন যে তারা গ্যারান্টি দিচ্ছেন যে জনগন এব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।  তিনি বলেন এখন বাঁধ,স্লুইস গেট ও নিকাশি খালের সংস্কার এই তিনটি কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চালিয়ে যেতে হবে।  জয়দীপ বলেন যে এবার শুধু প্রকৃতির দয়ায় এই শহর বেঁচে গেছে। আগামীতে পুরো বর্ষার মরশুম পড়ে আছে। আগামীতে তা নাও হতে পারে। তাই দু’বছর সময় পেয়েও যেহেতু জলসম্পদ বিভাগ শহরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে এর দায় কিন্তু জলসম্পদ মন্ত্রী তথা সরকারকেই নিতে হবে। ইতিমধ্যে জনগণের ক্ষোভের পারদ চড়ছে। উপরোক্ত তিন ব্যাপারে যদি সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রশাসন অবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয় তবে এই ইস্যুতে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করার প্রয়াস নেবে বিডিএফ।

শিমূলতলার বানভাসিদের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে এদিন বরাক ডেমোক্রেটিক যুবফ্রন্টের আহ্বায়ক হারাধন দত্ত বলেন যে এদিকে জল ঢুকেছে শিমুলতলা, গোকুল নগর, কান্দিগ্রাম ও আঙ্গারজুড় স্লুইস গেট অকেজো হওয়ায়। তিনি বলেন গত বন্যার পর থেকে আজ অব্দি এইসব স্লুইস গেটের কোন সংস্কার হয়নি যারজন্য এই অঞ্চলের প্রায় ১৫০০০ নাগরিককে এইধরনের শোচনীয় অবস্থার মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন এজন্য জলসম্পদ বিভাগ তথা সরকারই একশো শতাংশ দায়ী। হারাধন বলেন আর এসব মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই ব্যাপারে প্রশাসনিক তৎপরতা দেখা না গেলে বিডিএফ এর পক্ষ থেকে শিমুলতলা বাসীকে নিয়ে ভি আই পি রোড অবরোধ করতে তাঁরা বাধ্য হবেন।

অন্যান্যদের মধ্যে এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন মনোজ রায়, বাপন রায়, সুখদেব দাস, অষ্টলাল দাস, অজিত দাস, পিকলু দাস, রসময় দাস প্রমুখ।

Author

Spread the News