জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শহিদ দিবস পালন যৌথ ভাবে এআইডিএসও-র

বরাক তরঙ্গ, ১৯ মে : দিনভর নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মাতৃভাষা আন্দোলনের অমর শহিদদের স্মরণ করল যৌথ ভাবে এআইডিএসও, এআইডিওয়াইও, এআইএমএসএস এবং কমসোমল। সোমবার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কাছাড় জেলার ধোয়ারবন্দ, ছোট দুধপাতিল, শ্রীকোণা, শিলচরের তারাপুর, আশ্রমরোড, কনকপুর ইত্যাদি স্থানে অস্থায়ী শহিদবেদী স্থাপন করে মাল্যদান করা হয়। এছাড়াও শিলচর রেলস্টেশনে, শ্মশান ঘাটের শহিদ স্মৃতি স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান এআইডিওয়াইও’ পরিতোষ ভট্টাচার্য, এআইডিএসও’র জেলা সভাপতি স্বাগতা ভট্টাচার্য, এআইএমএসএস এর পক্ষে খাদেজা বেগম লস্কর প্রমুখ।

জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শহিদ দিবস পালন যৌথ ভাবে এআইডিএসও-র

এছাড়াও দুপুর দেড়টায় কিশোর কিশোরী সংগঠন কমসোমলের সদস্যদের মার্চ ফাস্ট সহ এআইডিএসও, এআইডিওয়াইও এবং এআইএমএসএস সংগঠনগুলোর প্রায় দুই শতাধিক কর্মীদের একটি মিছিল শিলচরের রাঙ্গিরখাড়ির ভাষা শহিদ বেদীর পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে গান্ধীবাগের শহিদ মিনারের সামনে এসে পৌঁছায়। সেখানে মিছিলে সামিল এডইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের জেলা সম্পাদক ভবতোষ চক্রবর্তী, অধ্যাপক অজয় রায়, সুব্রতচন্দ্র নাথ, নকুলরঞ্জন পাল,  এআইএমএসএস এর পক্ষে শম্পা দে, এআইডিওয়াইও’র জেলা কমিটির সহ -সভাপতি পরিতোষ ভট্টাচার্য, এআইডিএসও’র জেলা সভাপতি স্বাগতা ভট্টচার্য, কমসোমলের পক্ষে অরূপ মালাকার প্রমুখ সহ সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ শহিদ স্মৃতি স্তম্ভে প্রবেশ করে মাল্যদান করেন।

জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শহিদ দিবস পালন যৌথ ভাবে এআইডিএসও-র

এদিন বিকেল তিনটা থেকে শিলচরের শহিদ ক্ষুদিরাম মুর্তির পাদদেশে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পথনাটক ও আলোচনা সভা। সঙ্গীত পরিবেশন করে সঙ্গীত শিল্পী ইয়াসমিন বেগম লস্কর, অনিশা দাস, রূপক সরকার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন পাপিয়া সিকদার, স্মিগ্ধা নাথ, স্বাগতা চক্রবর্তী। এছাড়াও এআইডিএসও’র শিল্পীবৃন্দ পথনাটক প্রদর্শন করেন। এদিনের আলোচনা সভার মুখ্যবক্তা এআইডিএসও’র রাজ্য সভাপতি প্রোজ্জ্বল দেব বলেন, ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইতিহাস তৈরি হয়েছিল ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে। সেদিন নিজেদের মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শহিদ হয়েছিলেন এগারো জন আন্দোলনকারী। তিনি বলেন উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির চক্রান্তে তদানীন্তন কংগ্রেস সরকার আসামে জারি করে কুখ্যাত ভাষা আইন। সেই ভাষা আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন অবিভক্ত কাছাড় জেলার জনগণ। তারা আওয়াজ তুলছিলেন ‘জান দেব, তবুও জবান দেব না’। তাদের আত্মবলিদানে ভাষা আইনে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয় আসাম সরকার। সুরক্ষিত হয় বরাক উপত্যকার জনগণের মাতৃভাষার ইতিহাস।

জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শহিদ দিবস পালন যৌথ ভাবে এআইডিএসও-র

তিনি বলেন, রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে অর্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত হয়েছে ১৯৭২, ১৯৮৬ সালে। তখনও রক্ত ঝড়িয়ে রক্ষা করতে হয় মাতৃভাষার অধিকার। তিনি এও বলেন যে আজও চক্রান্ত চলছে, ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে মাতৃভাষা আন্দোলনের অর্জিত অধিকার। তিনি বলেন সিইউইটি পরীক্ষার্থীদের বাংলা বিষয়ের পরীক্ষার জন্য যেতে হচ্ছে গুয়াহাটি, আইজল, শিলং ইত্যাদি স্থানে। এ থেকে পরিষ্কার যে মাতৃভাষায় পড়াশোনা করতে যারা ইচ্ছুক তাদেরকে আটকানোর প্রচেষ্টা করছে বর্তমান সরকার। তাছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে মাতৃভাষা মাধ্যমের সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শহিদ দিবস পালন যৌথ ভাবে এআইডিএসও-র

মাতৃভাষা মাধ্যমের স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হল মাতৃভাষার চর্চা বন্ধ করে দেওয়া। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষা করতে হলে মাতৃভাষা মাধ্যমের স্কুলগুলোকে বন্ধ করা রুখতে হবে। তিনি ছাত্রছাত্রী ও যুবকদের দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে এবং বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে ১৯ শে মে এর চেতনাকে পাথেও করে এগিয়ে যেতে আহ্বান জানান।

জেলার বিভিন্ন প্রান্তে শহিদ দিবস পালন যৌথ ভাবে এআইডিএসও-র

Author

Spread the News