শিলচরে ছাত্র সমাবেশ সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্ৰতিষ্ঠা দিবস পালন এআইডিএসও-র
বরাক তরঙ্গ, ২৮ ডিসেম্বর : ছাত্র সমাবেশ সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ৭১তম প্ৰতিষ্ঠা দিবস পালন করল ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও কাছাড় জেলা কমিটি। ২৮ ডিসেম্বর সারা দেশের সঙ্গে শিলচরেও শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবতা রক্ষা, জাতীয় শিক্ষা নীতি-২০২০ বাতিল, মাতৃভাষা মাধ্যমের সরকারি স্কুল রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে কাছাড় জেলা কমিটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করে। সংগঠন মূলত প্ৰতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে শনিবার সংগঠনের কাছাড় জেলা কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন করেন জেলা সভাপতি স্বাগতা ভট্টাচার্য। এরপর শিলচরের পেনশনার্শ ভবনে এ উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সর্বভারতীয় কমিটির সহসভাপতি হিল্লোল ভট্টাচার্য। জেলা সভাপতি স্বাগতা ভট্টাচার্যের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভার উদ্দেশ্যে ব্যখ্যা করে বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদক স্বপন চৌধুরী।
সভার মুখ্য বক্তা হিল্লোল ভট্টাচার্য বলেন, ১৯৫৪ সালে বিজ্ঞানভিত্তিক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে গণতান্ত্রিক, বৈজ্ঞানিক, ধৰ্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা প্রনয়ন ও সাৰ্বজনীন শিক্ষার অধিকার অৰ্জনের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার ঐতিহাসিক প্রয়োজন পূরণে এই ছাত্র সংগঠনের জন্ম হয়। এবছর প্ৰতিষ্ঠা দিবস এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন শিক্ষার প্ৰাণসত্বা ধ্বংসকারী জাতীয় শিক্ষা নীতি, ২০২০ কে কাৰ্যকর করে শিক্ষার সৰ্বাত্মক ব্যবসায়ীকরণ, কেন্দ্ৰীয়করণ ও সাম্প্রদায়িককরণের প্ৰক্ৰিয়াকে তীব্রতর করার প্রচেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয় শিক্ষানীতির নির্দেশনা মেনে চালু হওয়া চার বছরের স্নাতক পরীক্ষার ত্রুটিপূর্ণ ফল ছাত্রছাত্রীদের হতাশ করেছে। অন্যদিকে এই শিক্ষা নীতির নির্দেশনা অনুসারে সরকারি স্কুল বন্ধ করা হচ্ছে। অসমে এই নীতি কার্যকর করে ৭০০০ বেশি মাতৃভাষা মাধ্যমের সরকারি স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তা নয় প্রাক প্রাথমিক থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পঠনপাঠনের দায়িত্ব পরিকাঠামোহীন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় পাঠ্যপুস্তকহীন শিক্ষা প্রদান, ষষ্ঠ শ্ৰেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত দরিদ্র পরিবারের ছাত্ৰছাত্ৰীদের বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের নামে গনিত, বিজ্ঞান সহ জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের পরিবৰ্তে মিস্ত্রী বা কারিগর তৈরির জ্ঞান প্রদান করে শিক্ষার মূলধারা থেকে সুকৌশলে ছাত্রছাত্রীদের সরিয়ে ফেলার চক্রান্ত রচিত হয়েছে। ইতিমধ্যে স্নাতক স্তরে ব্যর্থ প্রমাণিত সেমিস্টার ও মাল্টিডিসিপ্লেনারি কোর্স এখন নবম শ্ৰেণী থেকে প্রবর্তনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা ব্যয়বহুল হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক জ্ঞানার্জনের প্ৰক্ৰিয়াও ব্যাহত হবে। এই সর্বনাশা পদক্ষেপ গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপন, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে ডিগ্রি পাঠ্যক্ৰমে ভৰ্ত্তি হতে সৰ্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষা সিইউইটি এর প্ৰবৰ্তন, ব্লেন্ডেড শিক্ষার নামে কার্যত অনলাইনে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা, কলেজগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং ইউজিসি, এমসিআই, বিসিআই, এআইসিটিই ইত্যাদি ভংগ করে সৰ্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আমলাতান্ত্রিক সংস্থা এইচইসিআই গঠনের পদক্ষেপ শিক্ষার ব্যবসায়ীকরণ, কেন্দ্ৰীয়করণের প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। এতে দরিদ্র পরিবারের ছাত্ৰছাত্ৰীরা শিক্ষার সুযোগ লাভ থেকে বঞ্চিত করবে।
কেন্দ্ৰীয় বাজেটের ন্যূনতম ১০ শতাংশ ও রাজ্য বাজেটের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ন্যায়সংগত দাবি বার বার উত্থাপিত হলেও কেন্দ্র ও রাজ্যে বিভিন্ন সময়ে অধিষ্ঠিত কোনো সরকারই এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। বর্তমান কেন্দ্র সরকার উচ্চ শিক্ষা খাতে বাজেটের মাত্র ০.৩৫ শতাংশ বরাদ্দ করেছে। যত দিন যাচ্ছে ততই বাজার সঙ্কটে নিমজ্জিত পুঁজিপতি শ্রেণীর স্বার্থে সরকার শিক্ষা খণ্ডকে ব্যক্তি মালিকানাধীন করতে চাইছে। এই উদ্দেশ্যে শিক্ষার সামগ্রিক ব্যক্তিগতকরণের ব্লুপ্রিন্ট নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি’ ১৯৮৬ এর অপূরিত কাজ পূরণের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০ রচিত হয়েছে। এর ফলে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবতার উপর নেমে আসা আক্রমণ প্রতিহত করতে দেশব্যাপী জাত-পাত, ধৰ্ম, বৰ্ণ নিৰ্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা খুবই জরুরি। আজ এছাড়াও গুয়াহাটি, লক্ষীমপুর, যোরহাট, তেজপুর, নগাঁও, মাজুলী, নলবাড়ি, গোয়ালপাড়া, ধুবড়ি, দক্ষিণ শালমারা-মানকাছার, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ইত্যাদি স্থানেও প্রতিষ্ঠা দিবস পালিত হয়।