‘২৬ এ বিজেপিকে রুখতে একজোট বিরোধী শিবির, বৈঠক

বরাক তরঙ্গ, ১৩ নভেম্বর : অসমের রাজনীতিতে দেখা দিতে চলেছে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন। শাসক বিজেপিকে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রুখে দিতে একজোট হয়েছে বিরোধী শিবির। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতারা এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন। আসন্ন নির্বাচনে বিজেপির ‘অপশাসন’ থেকে রাজ্যকে মুক্তি দিয়ে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ সরকার গঠনই এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।

কংগ্রেসের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাইজর দল, অসম জাতীয় পরিষদ, আঞ্চলিক গণ মোৰ্চা, সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এমএল) এবং এপিএইচএলসি–এর সভাপতি ও রাজ্য সম্পাদকরা। বৈঠকে নেতৃবৃন্দ প্রতিশ্রুতি দেন যে, এই ঐক্যই অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন দিশা এনে দেবে।

কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈ বলেন, “বিজেপির অন্যায়, অত্যাচার ও দুর্নীতির শাসন থেকে আসামের মানুষকে মুক্ত করে নতুন যুগের সূচনা করতে আমরা সবাই একত্রিত হয়েছি।”

বিধায়ক মনোরঞ্জন তালুকদার, অখিল গগৈ, সাংসদ অজিতকুমার ভূঁইয়া এবং অসম জাতীয় পৰিষদের সভাপতি লুরিণজ্যোতি গগৈ এই ঐক্যের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, “এই ঐক্য অসমের উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।”

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ অজিত কুমার ভূঁইয়া (আঞ্চলিক গণ মৰ্চা), রাইজৰ দলর সভাপতি অখিল গগৈ, অসম জাতীয় পরিষদের সভাপতি লুরিণজ্যোতি গগৈ, সিপিএম বিধায়ক মনোরঞ্জন তালুকদার ও রাজ্য সম্পাদক সুপ্ৰকাশ তালুকদার, সিপিআই নেতা কনক গগৈ, সিপিআই(এমএল) নেতা বিবেক দাস এবং এপিএইচএলসি সভাপতি বিক্রম হাঞ্চ। এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের বহু জ্যেষ্ঠ নেতা।

এর আগে, গুয়াহাটির রাজীব ভবন-এ অনুষ্ঠিত প্রদেশ কংগ্রেসের রাজনৈতিক পরিক্রমা সমিতির বৈঠকেও একাধিক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের সংযোগ আরও মজবুত হবে বলে জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি গৌরব গগৈ জানান, জনগণের সুখ-দুঃখ বোঝার লক্ষ্যে ‘রাইজর পদূলিত রাইজর কংগ্ৰেস’ শীর্ষক এক বিশেষ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “অসমের প্রত্যন্ত অঞ্চল, গ্রামাঞ্চল, চা-বাগান, পাহাড় ও জনজাতীয় এলাকায় গিয়ে কংগ্রেস নেতারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবেন, তাঁদের সমস্যার কথা শুনবেন এবং তাঁদের ঘরে রাত্রিযাপন করবেন। আমরা জনগণের হৃদয় জয় করতে চাই।”

গগৈ আরও জানান, রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে দলীয় সীমা অতিক্রম করে সমাজ সচেতন নাগরিক, সাহিত্যিক, অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই সভাগুলি হবে জনমতের মঞ্চ, যেখানে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের পথ নির্ধারণ করা হবে।

নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রায় ২৯ হাজার বুথে ৮০-৯০ শতাংশ বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA) নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা এই মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। গগৈ বলেন, “সব কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে, এই উদ্যোগ গণতন্ত্রকে আরও মজবুত করবে।”

একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক ঐক্যের বার্তা দিতে কংগ্রেস ঘোষণা করেছে, আসন্ন ১৮ নভেম্বর প্রয়াত শিল্পী জুবিন গার্গের জন্মদিন উপলক্ষে “কাঞ্চনজঙ্ঘা – সংস্কৃতি হোক মৈত্ৰীৰ মন্ত্র” শীর্ষক বিশেষ সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

এছাড়াও, শিল্পীর প্রকৃতিপ্রেমের স্মৃতিতে রাজ্যের প্রতিটি বুথে নাহর গাছের চারা রোপণ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণে দলের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *