আইনি লড়াই করে এক দশক পর ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেলেন অঞ্জলি

বরাক তরঙ্গ, ২ আগস্ট : এক দশক আইনি লড়াই করে ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেলেন অঞ্জলি রায়। ২০১২ সালে বিদেশি ট্রাইব্যুনালের নোটিশ পেয়ে ছিলেন কাটিগড়ার বাসিন্দা অর্জুন নমশূদ্র ও তাঁর দিদি অঞ্জলি রায়। নোটিশ পেয়ে ভাই অর্জুন চরমপন্থা বেছে নেন, তবে তিনি সাহসের সঙ্গে আইনি লড়াই শুরু করেন। এই লড়াইয়ে ২০১৫ সালে তিনি ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দেন। কিন্তু পাননি ভোটাধিকার। হাল ছাড়েনি লড়াই চালিয়ে যান। প্রায় এক দশক পর ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তার ভোটাধিকার ফিরে পান।

যদি দেশের সরকার আমাদের ভারতীয় হিসেবে মানতে না চায়, তাহলে আমাদের এক জায়গায় ডেকে গুলি করে মেরে ফেললেই ভালো হয় : সাবিত্রী বিশ্বাস

অঞ্জলি জানিয়েছেন, তিনি বহুবার নির্বাচন আধিকারিকদের কাছে গিয়ে হাত জোড় করলেও কেউ তাঁর কথায় সাড়া দেননি। ভোটাধিকার না থাকায় এক সময় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল তার সব ধরনের সরকারি সুবিধা। এবার ভোটার আইডি কার্ড হাতে পেয়ে তিনি জানিয়েছেন, অন্তত জীবনের বাকি দিনগুলো মাথা উঁচু করে বাঁচবেন। তার পরিবারের তিনিই প্রথম ব্যক্তি যাকে বিদেশি ট্রাইব্যুনাল নোটিশ পাঠিয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণের নির্দেশ দিয়েছিল।

আইনি লড়াই করে এক দশক পর ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেলেন অঞ্জলি

অঞ্জলি বলেন, ‘আমি ২০১২ সালে নোটিশ পাওয়ার পর খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, তবে সাহস হারাইনি। এর কিছুদিন পর আমার ছোটভাই অর্জুনের নামেও একই নোটিশ আসে তবে সে ভয় পেয়ে আত্মহত্যা করে। প্রায় এক দশক পর আমার মায়ের নামেও নোটিশ জারি হয়েছিল এবং তিনি আদালতে হাজির হয়ে নাগরিকত্ব প্রমাণ করে ফিরেছেন। আমি ২০১২ সালে নোটিশ পাওয়ার পর ভোটদাতাদের তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল, আমি নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করলেই ভোট দিতে পারব। ২০১৫ সালে নিজের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করে আদালতের নির্দেশের নথি নিয়ে স্থানীয় নির্বাচন আধিকারিকদের কাছে যাই এবং আবেদন করি, আমার নাম যেন পুনরায় তালিকায় তোলা হয়। তবে তারা আমাকে বারবার অপেক্ষা করিয়েছেন, বলেছেন কিছু জরুরি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই নাম উঠে আসবে। প্রায় এক দশক অপেক্ষা করার পর এবার আমার নাম পুনরায় তালিকায় উঠে এসেছে। তবে এই দশ বছর আমি যে যন্ত্রণা ভোগ করেছি এর ভাগ শুধু আমাকেই নিতে হয়েছে।’

আইনি লড়াই করে এক দশক পর ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেলেন অঞ্জলি

এবছর প্রথম দিকে যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রণয়নবিধি প্রকাশ হয়, অঞ্জলি সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি প্রয়োজনে এই আইনের আওতায় পুনরায় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন। অর্জুন নমশূদ্রের দিদি এবং মা ছাড়াও তাঁর শাশুড়ি সাবিত্রী বিশ্বাস এবং তাঁর পরিবারের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের নোটিশ রয়েছে। তারা এখনও আদালতের চক্কর কাটছেন।

সাবিত্রী বলেন, একই পরিবারের এতজন লোকের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠিয়ে দেশের সরকার কী বোঝাতে চাইছে? আমরা প্রমাণ করলেও তারা মানতে রাজি নন। যদি দেশের সরকার আমাদের ভারতীয় হিসেবে মানতে না চায়, তাহলে আমাদের এক জায়গায় ডেকে গুলি করে মেরে ফেললেই ভালো হয়। আমরা বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারী নই, এটা আইনত প্রমাণ করলেও আমাদের সন্দেহের চোখেই দেখা হয়। আমাদের যখন দেশ নেই, আমাদের হয়ে কথা বলার কোনও নেতা নেই, তাহলে আমাদের শেষ করে দিলেই সব ঝামেলা মিটে যায়।’

Author

Spread the News