দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২৯ ডিসেম্বর : বরাক উপত্যকার নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে তুলে ধরে সম্মিলিত লোকমঞ্চের ১১তম ধামাইল প্রতিযোগিতা রবিবার গর্জনাবিশ্রামে সমাপ্ত হয়েছে। শিলচর সহ বরাকের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স উপস্থাপন করে হাজারো দর্শককে মুগ্ধ করেছে। সমবেত ধামাইল নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান দখল করেছে পাথারকান্দির নটরাজ দ্য রিদম। তাদের হাতে শ্যামলকুমার দাস স্মৃতি পুরস্কার সহ নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে হাইলাকান্দি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়। মন্মথকুমার দাস স্মৃতি পুরস্কার সহ নগদ অর্থ প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছে দুধপাতিল নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থা। জগৎমোহন সিংহ স্মৃতি পুরস্কার সহ নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়। শৃঙ্খলায় বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে মনুষ্যত্ব এনজিও। তাদের শেফালী নাথ স্মৃতি স্মারক পুরস্কার সহ নগদ অর্থ প্রদান করা হয়।
ধামাইল কন্যা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে পাথারকান্দির নটরাজ দ্য রিদমের সৃষ্টি দেব। তাঁর হাতে বাসন্তী রায় স্মৃতি পুরস্কার সহ নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে শিলচরের অষ্টসখী বৃন্দের পূজা সূত্রধর।অশোকারানি দাস স্মৃতি পুরস্কার ও নগদ অর্থ দেওয়া হয়। তৃতীয় স্থান অর্জন করেন শিলচর গুণময়ী রোডের শান্তশ্রী সমিতির পিঙ্কি দাস। তাঁকে দেওয়া হয় মাধবী গোস্বামী স্মৃতি পুরস্কার ও নগদ অর্থ।
উল্লেখ্য, প্রচুর সংখ্যক মানুষের সমাগম এই অনুষ্ঠানকে আগামী দিনের সাংস্কৃতিক জাগরণের শুভ লক্ষণ হিসেবে পরিণত করেছে। এই ধারাবাহিক প্রতিযোগিতা গত ১১ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে চলছে। সম্মিলিত লোকমঞ্চ লোকগানের শেখড় ধামাইলকে মানুষের অন্তরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অবিরত কাজ করে যাচ্ছে। বরাকের গ্রামীণ এলাকা থেকে শহুরে পর্যন্ত বিস্তৃত অংশগ্রহণকারীরা ধামাইলের মাধুর্যময় সুরে কৃষ্টি-সংস্কৃতির সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে জীবন্ত করে তুলেছে। রবিবারের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের সমাদর করা হয়েছে, যা অনুষ্ঠানের চূড়ান্ত মুহূর্ত হিসেবে দর্শকদের মনে রয়ে গেছে।
সম্পাদক ভাস্কর দাস সবার প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই প্রতিযোগিতা আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে জীবন্ত রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সকল প্রতিযোগী, দাতা ও দর্শকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এভাবে চলতে থাকলে বরাকের লোকসংস্কৃতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে।” অনুষ্ঠানের সাফল্য বরাক উপত্যকার সাংস্কৃতিক জাগরণের নতুন অধ্যায় লিখেছে। ধামাইলের মতো লোকগান যুবসমাজের মধ্যে জনপ্রিয়তা ফিরে পাচ্ছে, যা ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণ করছে। সম্মিলিত লোকমঞ্চের এই উদ্যোগ স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির জন্য অনুকরণীয়। ভবিষ্যতে আরও বড় আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা উপত্যকার সাংস্কৃতিক মানচিত্রকে সমৃদ্ধ করবে।


