নাম পরিবর্তন বিরোধী ছাত্র সংগ্রাম কমিটির অভিবর্তন

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৪ ডিসেম্বর : স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্যমন্ডিত করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নাম পরিবর্তন বিরোধী ছাত্র সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে আজ করিমগঞ্জের বিপিন চন্দ্র পাল স্মৃতি ভবনে সকাল ১১ টায় ছাত্র যুব অভিবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র যুব অভিবর্তন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষক, সমাজকর্মী সুনীত রঞ্জন দত্ত। অভিবর্তনের মূল প্রস্তাব পেশ করেন করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন বিরোধী ছাত্র সংগ্ৰাম কমিটির অন্যতম আহ্বায়ক সঞ্চিতা শুক্ল। অভিবর্তনে প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন নলবাড়ির প্রাক্তন শিক্ষক পরেশ দত্ত, করিমগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী, সমাজকর্মী অরুণাংশু ভট্টাচার্য, হাইলাকান্দির বিশিষ্ট কবি-সাহিত্যিক সৌম্যকান্তি ভট্টাচার্য, করিমগঞ্জের বিশিষ্ট আইনজীবী হাসিনা রহমান চৌধুরী, করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন বিরোধী ছাত্র সংগ্ৰাম কমিটির অন্যতম আহ্বায়ক প্রজ্জ্বল দেব, ছাত্র নেতা সাদিক আক্তার সহ ৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ ধর্মঘটের সংগ্ৰামী ছাত্র নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে স্বাগতা ভট্টাচার্য, পপিরা ইয়াসমিন, সাদিক আহমেদ, রাধা কোঁহার, রিম্পি বাগতি প্রমুখ। বক্তারা বলেন সমগ্ৰ দেশেই বিজেপি সরকার নাম পরিবর্তনের নিকৃষ্ট প্ৰয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতা আন্দোলন এবং বিভিন্ন গণ আন্দোলনের ঐতিহ্যমণ্ডিত করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত অন্যায়, অগণতান্ত্ৰিক ও অনেক্যের মধ্যে ঐক্যের ধারণার পরিপন্থী। তাই এই স্বৈরাচারী ও সাম্প্রদায়িক আক্রমণকে রুখতে হবে। আসামের বুকে যুগ যুগ ধরে হিন্দু ও মুসলমান জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। আজ সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে জনগণকে বিভক্ত করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন যে সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি নিয়ে করা হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত গড়ে উঠেছে। এর ভিত্তিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে এই নাম পরিবর্তনের অন্যায় ও জনবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য করাতে বক্তারা আহ্বান জানান।

তাঁরা এও বলেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বক্তব্য বিকৃত করে করিমগঞ্জ জেলার যে নাম পরিবৰ্তন করা হয়েছে তা রবীন্দ্ৰনাথ সহ সকল মনিষীদের অসাম্প্ৰদায়িক চিন্তা ও চেতনার পরিপন্থী। এই ধরনের সংকীৰ্ণ বিভাজনকামী অভিসন্ধি নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাতিল করতে দৃঢ় সংকল্প গ্ৰহণ করে সমস্ত ধরনের বাধা নিষেধ অতিক্রম করে তীব্ৰ গণ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য বক্তারা আহ্বান জানান।
উক্ত প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এছাড়াও অভিবর্তন ও চলমান আন্দোলনের সাফল্য কামনা করে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন বিশিষ্ট কবি উদয়ন ঘোষ, বিশিষ্ট গল্পকার মনতোষ চক্রবর্তী, বিশিষ্ট গল্পকার অরিজিৎ চৌধুরী এবং শিলচরের বিশিষ্ট সমাজকর্মী তপজ্যোতি ভট্টাচার্য প্রমুখ।

অভিবর্তনে বাংলাদেশে গত ১৮ ডিসেম্বর অত্যন্ত নারকীয়ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দিপুচন্দ্র দাসকে ধর্মের অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে হত্যা করা এবং সে দেশের তত্বাবধায়ক সরকারকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবি জানিয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। উক্ত অভিবর্তনে প্রজ্জ্বল দেব, সাদিক আক্তার, সঞ্চিতা শুক্ল, হোসাইন আহমেদকে আহ্বায়ক এবং সুজিত কুমার পালকে কোষাধ্যক্ষ হিসাবে নির্বাচিত করে স্বাধীনতা আন্দোলন ও গণ আন্দোলনের ঐতিহ্যমন্ডিত করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তন বিরোধী ছাত্র যুব কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির পক্ষ থেকে লক্ষ লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহ, স্থানে স্থানে ছাত্র যুব কমিটি গঠন, মিছিল, মিটিংয়ের আয়োজন এবং পরবর্তীতে করিমগঞ্জ শহরে বিশাল ছাত্র যুব মিছিল আয়োজনের কার্যসূচি পালনের ঘোষণা করা হয়।

অভিবর্তনে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্র- যুব ও নাগরিকেরা উপস্থিত হন। অভিবর্তন শেষে নব গঠিত ছাত্র যুব কমিটির পক্ষ থেকে দীপু চন্দ্র দাসের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগণের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে একটি মিছিল শহরের প্রধান প্রধান পথ পরিক্রমা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তির পাদদেশে সমবেত হয়। সেখান আয়োজিত প্রতিবাদী সভায় বক্তব্য রাখেন অরুণাংশু ভট্টাচার্য, প্রজ্জ্বল দেব ও সাদিক আক্তার।

এই অভিবর্তনে কবিতা আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী মৌসুমী ভট্টাচার্য। অভিবর্তনের শুরুতে করিমগঞ্জ জেলার নাম পরিবর্তনের বিরুদ্ধে নাটক ” করিমগঞ্জের পাঁচালী “মঞ্চস্থ করা হয়।
বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বদরুল হক চৌধুরী, পরিমল চক্ৰবৰ্তী এবং জুনেদ আহমেদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *