জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২৩ ডিসেম্বর : সহনশীলতা, স্বপ্ন আর পরিবেশ সচেতনতার এক অনন্য মিলনক্ষণের সাক্ষী থাকল শিলচর। রাজস্থানের তরুণ সাইক্লিস্ট ও পরিবেশকর্মী পাপ্পু রাম চৌধুরী সোমবার শহরে পৌঁছান দেশজুড়ে ৩৮,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে। ফিটনেস, শৃঙ্খলা এবং পরিবেশ রক্ষার দৃঢ় বার্তা নিয়ে তাঁর এই দীর্ঘ যাত্রা শহরের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। ‘শক্তি সংকল্প সফর, মাউন্ট এভারেস্ট সাইক্লিং অভিযান’-এর অধীনে এই সর্বভারতীয় সাইক্লিং যাত্রা শুধুমাত্র শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা নয়, বরং জাতীয় গর্ব ও সামাজিক দায়বদ্ধতার এক অনুপ্রেরণাদায়ী প্রয়াস। দেশের যুবসমাজকে সুস্থ জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং পরিবেশ সুরক্ষার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার বার্তাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
কাছাড় জেলায় সফরের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার পাপ্পু রাম চৌধুরী শিলচরের সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন ও জলবায়ু দায়িত্ববোধের গুরুত্ব তুলে ধরাই ছিল এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা বর্নিয়া দাসের উপস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা উৎসাহের সঙ্গে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এদিন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে, কাছাড় জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক গণেশ হরিজন তরুণ সাইক্লিস্টের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের বাস্তবমুখী ও অনুপ্রেরণামূলক কর্মকাণ্ড শিক্ষাক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাঁর মতে, “আজকের ছাত্রছাত্রীরা যখন এমন এক ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে আসে, যিনি স্বপ্ন, শৃঙ্খলা ও পরিবেশ রক্ষার বার্তাকে বাস্তব জীবনে রূপ দিয়েছেন, তখন তা পাঠ্যবইয়ের বাইরেও এক গভীর শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে দেয়। পাপ্পু রাম চৌধুরীর যাত্রা শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে জীবনবোধের এক সুন্দর সেতুবন্ধন।”

বৃক্ষ রোপন করার পর ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পাপ্পু রাম চৌধুরী এক আবেগঘন ও অনুপ্রেরণামূলক ভাষণে আত্মবিশ্বাস ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমার এই যাত্রা শুধু সাইক্লিং নয় এটি চরিত্র ও সচেতনতা গড়ে তোলার এক প্রয়াস।” তাঁর মতে, আজকের যুবসমাজের মধ্যেই দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণের অপরিসীম শক্তি লুকিয়ে রয়েছে। “যদি সেই শক্তি শৃঙ্খলা, ফিটনেস এবং দেশ ও পরিবেশের প্রতি দায়িত্ববোধের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তবে ভারতের অগ্রগতি অপ্রতিরোধ্য হবে,” বলেন তিনি।
সুস্থ অভ্যাস, সড়ক নিরাপত্তা এবং পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হল ধারাবাহিকতা ও আত্মবিশ্বাস। “আমি সাধারণ এক পরিবার থেকে এসেছি, কিন্তু বড় স্বপ্ন দেখার সাহস করেছি। আমি চাই আমাদের যুবসমাজ এভারেস্টের মতো উঁচু স্বপ্ন দেখুক এবং প্রতিদিন সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলুক। ফিটনেস কোনও বিলাসিতা নয়, এটি দায়িত্ব। শৃঙ্খলা কোনও বাধা নয়, এটি স্বাধীনতা। প্রকৃতি রক্ষা কোনও বিকল্প নয়, এটি আগামী প্রজন্মের প্রতি আমাদের কর্তব্য,” বলেন তিনি।
ছাত্রছাত্রীদের পরিবর্তনের বাহক হয়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যক্তিগত উদ্যোগই দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। “আপনি যে প্রতিটি চারা রোপণ করেন, যে প্রতিটি সুস্থ অভ্যাস গ্রহণ করেন এবং যে প্রতিটি শৃঙ্খলাবদ্ধ পদক্ষেপ নেন সবই জাতি গঠনের অংশ। কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্প থাকলে কোনও স্বপ্নই অধরা থাকে না,” তাঁর কণ্ঠে ছিল দৃঢ় প্রত্যয়।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে দেশের ২১টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অতিক্রম করা এই অভিযান কেবল দূরত্ব বা মাইলফলকে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এক বৃহত্তর স্বপ্ন ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। ২০২৬ সালে মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ করে শিখরে জাতীয় ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন করাই পাপ্পু রাম চৌধুরীর চূড়ান্ত লক্ষ্য যা এক সুস্থ, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও দৃঢ় ভারতের প্রতীক হয়ে উঠবে।
সাইক্লিং অভিযানের পাশাপাশি সারা দেশে এক লক্ষ চারা রোপণের লক্ষ্য নিয়ে তাঁর সবুজ অভিযানও সমান্তরালে এগিয়ে চলেছে। এখনও পর্যন্ত তাঁর যাত্রাপথে আয়োজিত বিভিন্ন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ৩০,০০০ চারা রোপণ করা হয়েছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু সচেতনতার প্রতি তাঁর দীর্ঘমেয়াদি অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।


