দীপ দেব, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ২২ ডিসেম্বর : বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর চলমান সহিংসতা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সামাজিক-সাংস্কৃতিক মঞ্চ ‘বরাকের আওয়াজ’ সোমবার শিলচর গোলদিঘি মিউনিসিপ্যাল মলের সামনে এক শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। একাধিক সংগঠন, সমিতি ও এনজিও-র প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কড়া সতর্কবাণী জানায়। বিশেষ করে ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে বস্ত্রহীন অবস্থায় গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পোড়ানোর নৃশংস ঘটনা সবাইকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।
সমাবেশে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের শিলচর শাখার অধ্যক্ষ স্বামী গুনসিন্ধু মহারাজ বলেন, “এই ঘটনা সমাজ থেকে মনুষ্যত্ববোধ ও যুক্তিবোধের সম্পূর্ণ উধাও হয়ে যাওয়ার নজির। বাংলাদেশের এসব ঘটনা অমানবিক ও উগ্রবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।” তিনি প্রত্যেক সনাতনীকে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াইয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।শিলচর শঙ্করমঠ ও মিশনের কর্মাধ্যক্ষ শ্রীমৎ বিজ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ বলেন, “বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই হিন্দু উপর অত্যাচার চলছে। সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়কে সুরক্ষিত করতে ভারত সরকারকে কড়াভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। দীপু চন্দ্র দাসের নিষ্ঠুর হত্যা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ মৌলবাদীদের দেশ হয়ে উঠেছে, যেখানে হিন্দুরা নিরাপদ নয়।”আইনজীবী তুহিনা বিশ্বাস মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশ আইনহীনতার দিকে নেমে গেছে, যেখানে নিষ্ঠুরতা ও বর্বরতা চরমে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটি মানবাধিকার রক্ষার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে।” ইউথ এগেইনস্ট সোশ্যাল ইভিলসের প্রতিনিধি সাংবাদিক দিলীপ সিং বলেন, “ইসলাম কখনো মানুষ হত্যা শেখায় না। এই সহিংসতায় জড়িতরা লুটপাট ও হত্যা করছে সেই মানুষদের, যারা একসময় তাদের আশ্রয় দিয়েছিল। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।” তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আসাম মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। সমাজকর্মী হৃষিকেশ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশে সহিংসতা নতুন নয়, এটি দীর্ঘদিনের পুরনো ঘটনা। বারবার হিন্দুরাই লক্ষ্যবস্তু হয়ছেন।
স্বপন শুক্লবৈদ্য বলেন, বাংলাদেশে হিন্দুরা একেবারেই নিরাপদ নন। বিচার সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। পীযূষ চক্রবর্তী দাবি করেন, “বাংলাদেশের উপর আঘাত ছাড়া এই বিশৃঙ্খলা শান্ত করা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে বাংলাদেশ থেকে সব হিন্দুকে ভারতে নিয়ে আসা এবং ভারতে থাকা বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর দাবি জানাই। সমাজকর্মী ড. রাজীব কর বলেন, এই সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের জীবন, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার দাবি তোলা। আকসা ছাত্র সংস্থার উপদেষ্টা রূপম নন্দী পুরকায়স্থ জানান, এই সহিংসতাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গভীর ধারা। একজন রাষ্ট্রের চরিত্র নির্ধারিত হয় তার সংখ্যালঘুদের সঙ্গে আচরণে। প্রতিবাদকারীরা দ্রুত বিচার, সংখ্যালঘু অধিকার রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার দাবি জানায়।
বরাকের আওয়াজের প্রতিনিধি সৌমিত্র দত্ত রায় বলেন, “ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তার পক্ষে গণতান্ত্রিক বার্তা দেওয়াই এর উদ্দেশ্য।” অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি-লেখক শতদল আচার্য। প্রথমা দত্ত রায়, মনোজ দাস, জয়দীপ দত্ত, দিলু দাস, কৃষ্ণাণু ভট্টাচার্য, অনুপ দেবসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এই অহিংস আন্দোলন ন্যায়বিচারের পক্ষে সাংবিধানিক পথে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।


