পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুঠার দিয়ে নৃশংস হত্যা, ধৃত খুনি

বরাক তরঙ্গ, ১৯ ডিসেম্বর : নগাঁও জেলার ধিঙের কাছখাটি এলাকায় এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে ধিঙের কাছখাটি অঞ্চলে ঘটে যায় এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনায় বাবা ইমদাদুল ইসলাম তার স্ত্রী তাজমিনা খাতুন এবং নিজের দুই সন্তান দিলহান হাসান ও আরহান হাসানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

এই ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় মানুষ এই নির্মম ঘটনার জন্য গভীর শোক ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে চলা পারিবারিক কলহ ও মতবিরোধের ফলেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সেই বিবাদ চরম আকার ধারণ করে এবং ধারণা করা হচ্ছে, ক্রোধে অন্ধ হয়ে ইমদাদুল ইসলাম এমন নৃশংস কাণ্ড ঘটায়।

ঘটনাটি ঘটে পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায়। পরিবার ঘুমিয়ে থাকাকালীন অভিযুক্ত ইমদাদুল কুঠার দিয়ে কুপিয়ে তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে আক্রমণ করে। স্ত্রী তাজমিনা খাতুন ও দুই সন্তান গভীর ঘুমে থাকা অবস্থাতেই এই হামলার শিকার হন, যার ফলে তিনজনেরই মৃত্যু হয়।

ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই ধিং থানার পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। রাত প্রায় ২টার সময় সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডে পুরো ধিং অঞ্চল স্তব্ধ হয়ে যায়। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন অভিযুক্ত ইমদাদুলকে আটক করে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। পরে ধিং পুলিশ এমদাদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। জেরার সময় তার কাছ থেকে প্রাথমিক স্বীকারোক্তি পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।

এদিকে, নিহত তিনজনের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নগাঁও সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে হত্যার ধরন ও ব্যবহৃত অস্ত্র সম্পর্কে আরও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা এই ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন। তদন্ত এগিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঘটনা সম্পর্কে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “রাত প্রায় দুটো নাগাদ আমরা প্রচণ্ড চিৎকার শুনে ছুটে আসি। এসে এমন দৃশ্য দেখি। সে (হত্যাকারী) বলছিল—আমি তিনজন মানুষকে মেরেছি, নিজের পরিবারকে মেরেছি। তারপর সে কুঠার দিয়ে গ্রিল ভেঙে বলে, ‘এখন তোমরা দেখো।’ এই বলে সে ওইদিকে চলে যেতে চাইছিল। এরপর আমরা তাকে ধরে বেধে পুলিশে তুলে দিই। কী কারণে এমন হলো, তা আমরা বলতে পারি না। আমরা চিৎকার শুনে প্রথমে ভেবেছিলাম চোর এসেছে। এসে দেখি খুন হয়ে গেছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *