বরাক তরঙ্গ, ১৫ ডিসেম্বর, সোমবার,
‘ভাষা শহিদ স্টেশন’ নামকরণের দাবি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রেখে সরকার যে অবস্থান গ্রহণ করে চলেছে, তা কোনও একক ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর প্রতি অবহেলা নয়; বরং সমস্ত মাতৃভাষাপ্রেমী মানুষের আবেগ, ইতিহাস ও আত্মত্যাগের প্রতিই এক গভীর অসম্মান। ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়া শহিদদের স্মৃতি কোনও নির্দিষ্ট ভাষা বা অঞ্চলের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়। তা ভারতের গণতান্ত্রিক চেতনা, ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক সম্মানের এক উজ্জ্বল প্রতীক। সেই প্রতীকের স্বীকৃতি দিতে বারবার গড়িমসি করা সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যসভার সদস্য কণাদ পুরকায়স্থের স্পষ্ট, সাহসী ও দৃঢ় অবস্থান নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। সংসদের মতো সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক মঞ্চে ‘ভাষা শহিদ স্টেশন’ নামকরণের দাবি উত্থাপন করে তিনি কেবল বরাক উপত্যকার মানুষের আবেগকেই তুলে ধরেননি, বরং ভাষাগত অধিকার ও মর্যাদার প্রশ্নটিকে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন। গণতন্ত্রে একজন জনপ্রতিনিধির প্রকৃত দায়িত্ব এখানেই—জনগণের ন্যায্য ও নৈতিক দাবিকে নির্ভীকভাবে তুলে ধরা, তা শাসকপক্ষের কাছে যতই অস্বস্তিকর হোক না কেন।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কণাদ পুরকায়স্থ কেবল ভাষার প্রশ্নে আবেগপ্রবণ বক্তব্যেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বরাক উপত্যকার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিশেষ করে প্রস্তাবিত চন্দ্রনাথপুর–লঙ্কা রেললাইন এবং বরাক অঞ্চলে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়টি তাঁর আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এই উদ্যোগ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, তিনি বরাকের সার্বিক উন্নয়ন—যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।
ভাষার মর্যাদা ও উন্নয়নের স্বপ্ন—এই দুই বিষয়কে কখনওই আলাদা করে দেখা যায় না। ভাষা মানুষের আত্মপরিচয়ের ভিত্তি, আর উন্নয়ন সেই পরিচয়কে টিকিয়ে রাখার শক্ত ভিত। সরকার যদি সত্যিই সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারতের কথা বলে, তবে ‘ভাষা শহিদ স্টেশন’ নামকরণের মতো ন্যায্য, ঐতিহাসিক ও প্রতীকী দাবিতে আর বিলম্ব করার কোনও যুক্তিসংগত কারণ নেই। একইসঙ্গে বরাকের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলিকে দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখানোও সমান জরুরি।


