মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ১২ নভেম্বর : এপার বাংলা আর ওপার বাংলার কোটি কোটি দর্শকদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সিলেটের তরুণ কনটেন্ট ক্রিয়েটর দীপঙ্কর দাস, যিনি সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দীপ’ নামে। বয়স মাত্র একুশ। অতি অল্প বয়সেই থেমে গেল এক সম্ভাবনাময় জীবনের দীপশিখা।
দীপঙ্করের আকস্মিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক মাধ্যমে নেমে আসে শোকের ছায়া। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না, হাস্যরসের মাধ্যমে লক্ষ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সেই প্রাণবন্ত তরুণ আর নেই। ফেসবুক, ইউটিউব ও ইনস্টাগ্রামজুড়ে তাঁর ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মীরা শোকবার্তা জানাচ্ছেন, অঝোরে কাঁদছেন তাঁর প্রয়াণে।
গত একমাস আগেই উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে পরিবার, পরিজন ও প্রিয়জনদের ছেড়ে মালয়েশিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন দীপঙ্কর। পড়াশোনা ও নতুন জীবনের প্রস্তুতি নিয়েই তিনি ছিলেন ব্যস্ত। কিন্তু মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় আজ ভোর পাঁচটার দিকে হঠাৎই বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন তিনি। সহকর্মীরা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই আকস্মিক মৃত্যুর খবর দেশে পৌঁছাতেই সিলেটের গোপালটিলা এলাকার নিজ বাড়িতে নেমে আসে শোকের আবহ। ভোর থেকে শোকার্ত মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ে বাড়ির আঙিনা। স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু সকলে ছুটে আসছেন সন্তানহারা মা’কে সান্ত্বনা দিতে। বাতাসে শুধুই শোনা যাচ্ছে আহাজারির শব্দ।
দীপঙ্করের কনটেন্টে হাসি থাকলেও তাঁর জীবনকাহিনি আজ অশ্রুভেজা এক অধ্যায় হয়ে উঠেছে।অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর তৈরি ভিডিওগুলো দুই বাংলার দর্শকদের মনে দাগ কেটেছিল। নিজের দিদিমা, মা, মামা ও ছোট ভাই ধ্রুবকে সঙ্গে নিয়ে তিনি তৈরি করতেন পারিবারিক মজার কনটেন্ট যা মানুষকে একদিকে হাসাত, অন্যদিকে ছুঁয়ে যেত হৃদয়। তাঁর প্রতিটি ভিডিওয় ছিল সহজ-সরল পারিবারিক ভালোবাসা, মানবিকতার বার্তা ও নিখাদ আনন্দ।
এক তরুণের এমন প্রতিভা ও জনপ্রিয়তা এত কম সময়ে অর্জন বিরল। হাসির আড়ালে যে এমন এক সংবেদনশীল হৃদয় লুকিয়ে ছিল, তা আজ অনুভব করছে গোটা বাংলা সমাজ।
দীপঙ্করের এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন দীপ শুধু কনটেন্ট ক্রিয়েটর ছিল না, সে ছিল আমাদের পরিবারের একজন। ওর হাসি, ওর আন্তরিকতা আজও কানে বাজছে। বিশ্বাস করতে পারছি না, দীপ আর ফিরে আসবে না।
বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ভক্তরা দীপঙ্করের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনলাইনে নেমেছেন শোক মিছিলে। অনেকেই তাঁর পুরনো ভিডিও শেয়ার করে লিখছেন,তুমি হাসি দিয়ে যে হৃদয় জয় করেছিলে, আজ সেই হাসিই আমাদের কাঁদাচ্ছে।
জীবনের শুরুতেই শেষ হয়ে গেল এক উদীয়মান তারকার যাত্রাপথ। কিন্তু দীপঙ্করের সৃষ্টিকর্ম, তাঁর হাসি আর মানুষের মুখে ফোটানো আনন্দ সেটাই হয়তো হয়ে থাকবে তাঁর চিরন্তন পরিচয়।


