রাধারমন গোস্বামী জিউর পূর্ণ আর্ভিভাব তিথি উপলক্ষে শিলচর রাঙ্গিরখাড়িতে ধর্মীয় উৎসব

বরাক তরঙ্গ, ৪ ডিসেম্বর : শ্রীশ্রী রাধারমন গোস্বামী জিউর ১১১তম পূর্ণ আর্ভিভাব তিথি উপলক্ষে শ্রীশ্রী রাধারমন গোস্বামী পুরাতন উপাসনা ও উৎসব কমিটির উদ্যোগে শিলচর রাঙ্গিরখাড়ীতে ৩ থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী নানান ধর্মীয় কার্যক্রম ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় জনসাধারণ ও ভক্তদের ব্যাপক অংশগ্রহণে এই উৎসব সফল ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।প্রথম দিন, ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪৪ মিনিটে শুরু হয় প্রভুর জলভরা ও স্নান অনুষ্ঠান, যা রাত ৮টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত চলেছিল। এরপর উপাসনা ও পূজার মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় দিন, ৪ ডিসেম্বর ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে মন্দিরে মঙ্গল আরতি দিয়ে সূচনা হয়। সকাল ৭টা ৪৮ থেকে ৯টা ৫৬ পর্যন্ত প্রভুর স্নান সম্পন্ন হয় এবং গুরু পূজা ও গুরু গীতা পাঠের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ভাব জাগ্রত হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় অঞ্জলি প্রদান, নামকীর্তন ও ভজনবন্দনা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে ৫টা ৩০ মিনিটে ১১১টি প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে উৎসবের যুগ শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে প্রভুপাদের স্তব, আরতি ও ভজন-সঙ্গীত পরিবেশে আধ্যাত্মিক উত্তেজনা ছড়ায়। রাত ৯টা ১০ মিনিটে বাউল সঙ্গীত অনুষ্ঠানে ভক্তরা মুগ্ধ হন।শেষ দিন, ৫ ডিসেম্বর ভোর ৪টা ৩০ মিনিটে মনোমুগ্ধকর মঙ্গল আরতির পর শ্রীশ্রী প্রভুর প্রতিকৃতি নিয়ে নগর পরিক্রমা শুরু হয়, যা নন্দ উৎসব, দধি ভাণ্ড ও কীর্তনের মাধ্যমে জনসমাগমের রূপ পায়। দুপুর ১টায় মহন্ত বিদায় অনুষ্ঠান করে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।উৎসব পরিচালক বিপ্ররাজ পাল জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে এই উৎসবের ধারাবাহিকতা শুরু হয় নীলমণি বর্মনের বাসভবন থেকে। পরবর্তীতে পাবলিক স্কুল এবং নেতাজী স্কুলের মাঠে অনুষ্ঠিত হলেও বর্তমানে পরীক্ষার কারণে এবছর মদনমোহন পার্কের লেনের নিকটে অঞ্জন রায়ের মাঠে নিরাপদ ও সুষ্ঠুভাবে পালিত হচ্ছে। অঞ্জন রায়কে অগ্রিম ধন্যবাদ জানানো হয়।

উৎসব সম্পাদক রাজীব সাহা (বাপ্পী) জানান, এবছর ঢাকা দক্ষিণ থেকে মিহির মিশ্র মহাপ্রভুর বিগ্রহ বিশেষভাবে অংশগ্রহণ করে। প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামী প্রায় অর্ধশতাধিক ভক্তকে দীক্ষা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সহ-সভাপতি সুমিত মালাকার, হীরক রায়, প্রশান্ত চক্রবর্তী, সহ-সম্পাদক অলক রায়, টিটু দাস, শঙ্কু চন্দ, যুগ্ম সম্পাদক বিপ্লব দাস, মান্তু দেব রায়, কোষাধক্ষ কাজল রায়, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মনোজ পালসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।শ্রীশ্রী রাধারমন গোস্বামী জিউর ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব স্থানীয় সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে ভক্ত-সমাজের বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার এক জ্বলন্ত প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই ধর্মীয় উৎসব স্থানীয় এলাকায় ঐক্যের মঞ্চ গড়ে তোলে এবং আনন্দ, আধ্যাত্মিকতা ও সান্নিধ্যের একটি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *