বরাক তরঙ্গ, ২৫ নভেম্বর : শিলচরে প্রস্তাবিত উড়াল সেতু নিয়ে এখন অবদি নাগরিকদের মনে বিভ্রান্তি রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অবিলম্বে নাগরিক সভায় উল্লেখিত পাঁচটি প্রবেশপথ সহ উড়াল সেতুর ডিপিআর ও মানচিত্র জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানাল বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট।
বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এদিন বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন যে প্রস্তাবিত উড়াল সেতু নিয়ে বিভিন্ন মতামত উঠে আসছে। অনেকেই বলছেন যে ক্যাপিট্যাল পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে শপার্স স্টপ পয়েন্টে শেষ হলে এই সেতু শহরের ব্যাস্ততম এলাকার যানজট সমস্যার সমাধানে তেমন সহায়ক হবে না, কারণ এর মধ্যবর্তী এলাকায়ই যানজট অধিক হয় এবং এই যাতায়াতের ক্ষেত্রে তা কাজে আসবে না। নাগরিক সভায় এই সমস্যার কথা বলা হলে বরাক উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী বলেছিলেন যে এই সেতুর অতিরিক্ত পাঁচটি প্রবেশপথ থাকবে। কিন্তু এরপর আর এই নিয়ে আর কিছু জানা যায়নি। যেহেতু ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের ঠিকাদার ঠিক করা হয়েছে তাই এনিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তাই অবিলম্বে প্রবেশপথ সমূহ সহ এই প্রস্তাবিত সেতুর ডিপিআর ও মানচিত্র প্রকাশ করার জন্য তাঁরা সরকার ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। এই ডিপিআর জনসমক্ষে প্রকাশিত হলে জনগণের বিভ্রান্তি নিরসন হবে বলে এদিন মন্তব্য করেন জয়দীপ।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, শিলচরের ব্যবসায়ী মহল থেকে এই উড়াল সেতুর কাজ স্থগিত রাখার জন্য আবার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন যে উড়াল সেতুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল প্রায় দু’বছর আগে। যদি এই ব্যাবসায়ীদের মধ্যে এই প্রকল্প নিয়ে ওজর আপত্তি থেকে থাকে তবে তাঁরা এতদিন নীরব ছিলেন কেন ? অনেক আগেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে তাঁদের অবস্থান ও আপত্তি তুলে ধরতে পারতেন। এখন যখন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে, তখন এতে বাধা দিলে তাঁরা সবার বিরাগভাজন হবেন। কারণ যাঁদের ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাঁদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। কাজ চলাকালীন হয়তো তাঁদের কিছুটা ব্যাবসায়ীক ক্ষতি হতে পারে কিন্তু তা সাময়িক। সেতু নির্মাণ হয়ে গেলে ব্যাবসা পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে। তাই বৃহত্তর স্বার্থে এইটুকু ত্যাগ তাঁদের স্বীকার করতেই হবে। তিনি বলেন, এইভাবে ওজর আপত্তি চললে শিলচরের মানুষ চাইছেন না বলে এই প্রকল্পকে আবার স্থগিত করে দেওয়া হতে পারে।
প্রদীপ দত্তরায় আরও বলেন, শিলচরের যানজট সমস্যা সমাধানে বৃত্তাকার বা সমান্তরাল রাস্তা নির্মাণ, রাস্তার পরিসর বৃদ্ধি, ফুটপাত দখলমুক্ত করা এবং ই-অটোর সংখ্যা ও অনিয়ন্ত্রিত চলাচলে রাশ টানা ইত্যাদি যেসব প্রস্তাব এসেছে সবটাই গুরুত্বপূর্ণ। এনিয়েও প্রশাসনকে অবিলম্বে ভাবতে হবে এবং কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে এসবের সাথে উড়াল সেতুর সম্পর্ক নেই। উড়াল সেতু হলেও এইসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে কোন বাধা নেই। তাই উভয় ব্যাবস্থাই বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছেন তারা।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক আরও বলেন, মহাসড়ক নিয়ে ইদানিং শাসকদলের নেতারা আবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আগেও এমন বহু প্রতিশ্রুতি আমরা শুনেছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই কার্যক্ষেত্রে জানুয়ারীর মধ্যে কাজ শেষ হলেই তবেই এসব বিশ্বাসযোগ্য হবে এবং তখনই এর কৃতিত্ব দেওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, শাসক দলের পক্ষ থেকে এই কাজকে দশ বছর ঝুলিয়ে রাখার জন্য পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারকে দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু যা বাস্তব তা হচ্ছে, বিগত নবছর ধরে রাজ্য ও কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকা সত্ত্বেও মহাসড়কের মাত্র ত্রিশ কিঃমিঃ নির্মাণের কাজ শেষ করতে চূড়ান্ত ব্যার্থ হয়েছে শাসক দল। তাই এসব দোষারোপে মনোযোগী না হয়ে অনতিবিলম্বে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে মনোযোগী হবার জন্য শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।


