রাজীব মজুমদার, ধলাই।
বরাক তরঙ্গ, ২৪ নভেম্বর : দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে সোমবার দিনব্যাপী ধলাই সমজেলায় অনুষ্ঠিত হল অসম-মিজোরাম সীমান্ত উৎসব। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব দুই রাজ্যের জনগণের মধ্যে মৈত্রী ও শান্তি বজায় রাখার বার্তা নিয়ে এলো। এদিন সকাল দশটায় ফিতা কেটে উৎসবের সূচনা করেন কাছাড়ের জেলা কমিশনার মৃদুল যাদব, মিজোরামের কলাসিব জেলার জেলা উপায়ুক্ত রবার্ট সি, শিলচরের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য এবং ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস। অনুষ্ঠানের শুরুতে উভয় রাজ্যের অতিথিদের নিজ নিজ রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী প্রথা মেনে উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রদান করা হয়, যা সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতার সময় সকলেই উভয় রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলে যাহাতে চিরস্থায়ী শান্তি বজায় থাকে, সেই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তাঁরা বলেন, এই ধরনের উৎসব দুই রাজ্যের মানুষের মনের দূরত্ব ঘুচিয়ে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
উৎসব মঞ্চে উভয় রাজ্যের শিল্পীরা নিজেদের পরম্পরাগত রঙিন বস্ত্র পরিধান করে বিভিন্ন ধরনের মন মুগ্ধকর নৃত্য পরিবেশন করেন। লোকনৃত্য ও লোকসংগীতের এই পরিবেশনা দুই রাজ্যের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। এছাড়াও, দুই রাজ্যের যুবকদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় একটি প্রীতি ফুটবল ও ভলিবল ম্যাচ, যা ক্রীড়ার মাধ্যমে একতার বন্ধনকে মজবুত করে।

অনুষ্ঠানস্থলে উভয় রাজ্যের হস্তশিল্প, বস্ত্র এবং রকমারি মুখরোচক খাবারের স্টল বসেছিল। দর্শনার্থীরা উৎসাহের সাথে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় হস্তশিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেন। অনুষ্ঠান শেষে দুই রাজ্যের প্রতিনিধি দলও সমস্ত স্টলগুলি ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় উদ্যোগকে উৎসাহিত করেন।

উল্লেখ্য, গত ২০২১ সালে অসম-মিজোরাম সীমান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে দুই রাজ্যের মধ্যে এক উশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে আসাম পুলিশের ছয়জন জোয়ান শহীদ হয়েছিলেন। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার পর থেকে উভয় রাজ্যের সরকার এবং প্রশাসন মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে সচেষ্ট হয়েছে। এরই ফলস্বরূপ, গত ২০২২ সাল থেকে সীমান্ত শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রশাসনিক স্তরে নিয়মিত বৈঠকের পাশাপাশি প্রতি বছর একবার করে এই সীমান্ত উৎসব আয়োজন করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুই রাজ্যের মানুষের মধ্যে পুরনো বিবাদ ভুলে নতুন করে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠছে।


