বরাক তরঙ্গ, ১৩ নভেম্বর : দেশপ্রেম, ঐক্য ও সংস্কৃতির এক অনন্য সংমিশ্রণে ধলাই সমজেলায় বৃহস্পতিবার উদযাপিত হল সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের ১৫০তম জন্মজয়ন্তী। জেলা প্রশাসন কাছাড়, ধলাই সমজেলা প্রশাসন ও ‘মাই ভারত’ কাছেড়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানটি ছিল জাতীয় ঐক্য ও আত্মবিশ্বাসের এক স্মরণীয় উদযাপন। বিভিন্ন দফতর, এনজিও, ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সক্রিয় অংশগ্রহণে ধলাই জুড়ে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বিশাল ঐক্য মিছিল দিয়ে, যা ধলাইয়ের বাম নিত্যানন্দ মাল্টিপারপাস স্কুলের সামন থেকে শুরু হয়। মিছিলের উদ্বোধন করেন শিলচরের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য, ধলাইয়ের বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস ও সম জেলা আয়ুক্ত রক্তিম বড়ুয়া। প্রায় এক হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রী, যুব স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ মানুষ এই মিছিলে অংশ নেন। “শান্তি, সম্প্রীতি ও আত্মনির্ভর ভারতের” বার্তা নিয়ে মিছিলটি ধলাইয়ের প্রধান সড়কগুলি অতিক্রম করে সমজেলা অডিটোরিয়ামে পৌঁছায়, যেখানে উপস্থিত সকলেই ভারত মাতার উদ্দেশ্যে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিলচরের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য। তিনি ভারতের লৌহ পুরুষ সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, সর্দার প্যাটেলের অতুলনীয় রাষ্ট্রনায়কত্বের কারণে ৫৬২টি দেশীয় রাজ্য একত্রিত হয়ে এক জাতিতে পরিণত হয়েছিল। তাঁর দূরদর্শিতা আজও আমাদের জাতীয় চেতনার দিশারি হয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, “স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সর্দার প্যাটেলের দূরদর্শিতা ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির ফলেই ভারত ৫৬২টি দেশীয় রাজ্য থেকে একক সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছিল। যদি তাঁর দৃঢ় সংকল্প ও প্রজ্ঞা না থাকত, তবে আজকের ভারত হয়তো বিভক্ত হয়ে যেত, অন্তর্কলহ ও বিভাজনের শিকার হত। জাতি কখনও তাঁর তুলনাহীন অবদান ভুলবে না। তাঁর এই অমর উত্তরাধিকারের কারণেই মোদি সরকার তাঁর জন্মজয়ন্তীকে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং দেশজুড়ে রান ফর ইউনিটি কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করছে।” তিনি বলেন, “মোদি সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বে সর্দার প্যাটেলের আদর্শ আজও নতুন প্রজন্মের কাছে জীবন্ত হয়ে আছে। রান ফর ইউনিটি ও এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত উদ্যোগের মাধ্যমে ঐক্য, সংহতি ও জাতীয় নির্মাণের যে চেতনা জাগ্রত হচ্ছে, তা সর্দার প্যাটেলের সত্যিকারের উত্তরাধিকার।” এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস, ধলাই সমজেলা আয়ুক্ত রক্তিম বড়ুয়া, মাই ভারত এর উপ সঞ্চালক মেহবুব আলম লস্কর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীরা পরিবেশন করেন দেশাত্মবোধক গান ও নৃত্য বিহু, ধামাইল, মণিপুরি ও ডিমাসা নৃত্যের মতো ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। সোনাই সার্কল অফিসার মারিয়া তানিম উপস্থিত যুবকদের উদ্দেশ্যে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের শপথ পাঠ করান।
এছাড়াও, ধলাই সমজেলার বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিজেদের হাতে তৈরি পণ্য নিয়ে “স্বদেশী মেলা”-য় অংশগ্রহণ করে, যা “ভোকাল ফর লোকাল”-এর ভাবনাকে আরও জোরদার করে। ঐতিহ্যবাহী খাবার ও হস্তশিল্পের স্টল দর্শকদের আকর্ষণ করে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির মাধ্যমে, যার মূল ভাবনা ছিল “এক পেড মা কে নাম।” সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য, বিধায়ক নীহাররঞ্জন দাস এবং অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিরা বৃক্ষরোপণ করেন ঐক্য ও সবুজ ভারতের অঙ্গীকার হিসেবে। শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত ও ধলাই-নরসিংহপুর উন্নয়ন খণ্ডের ভারপ্রাপ্ত খণ্ড উন্নয়ন আধিকারিক নেইহাট হাওলাই। তিনি সকল আধিকারিক, অংশগ্রহণকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান অনুষ্ঠানটি সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য।


