অধীর চৌধুরীর জয়ের অশ্বমেধের ঘোড়াকে থামালেন ইউসুফ
৪ জুন : প্রায় ৯ ঘন্টা ধরে চলছে লোকসভা ভোটের গণনা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সমস্ত এক্সিট পোলের হিসেব নিকেশ একেবারে উলটে গিয়েছে বাংলায়। তবে সেসবের বাইরে এ রাজ্যের রাজনীতিতে যে ঘটনাকে একেবারে ‘ইন্দ্রপতন’ বলে অ্যাখ্যা দিচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তা হল, ৫ বারের সাংসদ অধীর চৌধুরীর তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ইউসুফ পাঠানের কাছে হেরে যাওয়া। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পরপর পাঁচবার বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর অবশেষে অধীর চৌধুরীর জয়ের অশ্বমেধের ঘোড়াকে থামালেন ইউসুফ পাঠান। জয়ের ডবল হ্যাটট্রিক করা হল না প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির। ১৯৯৯ সালে আরএসপি প্রার্থী প্রমথেশ মুখার্জিকে পরাজিত করে অধীর চৌধুরী জয়ী হওয়ার পর আর তাঁকে এই কেন্দ্রে থামানো যায়নি।
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল তাঁর বিরুদ্ধে গায়ক ইন্দ্রনীল সেন, বিধায়ক অপূর্ব সরকারের মত দুঁদে প্রার্থীকে দাঁড় করিয়েও পরাজিত হয়েছে। তবে এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ অধ্যুষিত বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে গুজরাটের বাসিন্দা ইউসুফ পাঠানকে দাঁড় করিয়ে বাজিমাত করল তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে অধীর চৌধুরী ৫ লক্ষ ৯১ হাজার ১৪৭ ভোট পেয়েছিলেন এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী অপূর্ব সরকারকে ৮০,৭৩৭ ভোটে পরাজিত করেছিলেন। সেবার শতাংশের নিরিখে অধীর চৌধুরী ৪৫.৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। বহরমপুর লোকসভা নির্বাচনের সম্পূর্ণ ফলাফল ঘোষণা না হলেও নির্বাচন কমিশনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ইউসুফ পাঠান, অধীর চৌধুরীর থেকে প্রায় ৬৮ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন । আর তাই নিজের জয়ের বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত ইউসুফ। মঙ্গল বিকেলেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ইউসুফ বলেন, ‘আমার এই জয়ের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাই। এই জয় কেবল আমার নয়, সমস্ত কর্মীদের জয়।’ বহরমপুরের পাঁচবারের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে ইউসুফ বলেন, ‘ইতিহাস তৈরি হয়, রেকর্ড তৈরি হয় তা নতুন করে ভাঙার জন্য। আমি এখনও অধীর চৌধুরীকে সম্মান করি। উনি একজন ‘সিনিয়র লিডার।’ বহরমপুরের বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে ইউসুফ বলেন, ‘আমি নির্বাচনী প্রচার চলার সময় যা কথা দিয়েছি সেগুলো পালন করার চেষ্টা করব। বহরমপুরে একটি স্পোর্টস অ্যাকাডেমি করার ইচ্ছা রয়েছে যাতে এখানকার ছেলেমেয়েরা আরও ভাল খেলাধুলার সুযোগ পায়। এর পাশাপাশি শিল্পের জন্য কাজ করারও ইচ্ছা রয়েছে।’
যদিও এখনই স্থায়ীভাবে বহরমপুরে থাকার তাঁর কোনও পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘গুজরাটে আমার পরিবার রয়েছে। আমি যখনই সময় পাব বহরমপুরে আসব এবং দিল্লিতে গিয়ে আমার কাজ করব।’ আরও জানান, ‘মমতা ব্যানার্জি এবং অভিষেক ব্যানার্জির সাথে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। এতদিন লোকে আমাকে ক্রিকেটার হিসেবেই চিনতো। এখন সাংসদ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে।’
৫ বারের সাংসদ অধীর হারের মুখে দাঁড়িয়ে কী বলছেন? তাঁর মতে, ‘লড়াই করতে গিয়ে হার কেউ কি মানতে পারে! তবে আমি চেষ্টা করেছি। হার তো হার। আমি প্রতিদ্বন্দ্বী ইউসুফের কাছে হেরেছি।’ ইউসুফের শুভকামনাও করেছেন তিনি। খবর : আজকাল ডট ইন।