কাছাড়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের এক দশক উদযাপনে শিলচরে নারী দিবস পালন

জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ৮ মার্চ : নারী ক্ষমতায়নের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছুঁয়ে গেল কাছাড় জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন,  জেলা সমাজকল্যাণ বিভাগের সহযোগিতায় এবং ‘সঙ্কল্প: হাব ফর এম্পাওয়ারমেন্ট অব উইমেন, কাছাড়’-এর উদ্যোগে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শনিবার শিলচরের গুরুচরণ কলেজের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মাহাত্ম্যকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলে। এই মহতি সমাবেশে চিকিৎসক, সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্ব অর্জনকারী বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন, যারা নারী-সমতার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাছাড় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সুব্রত সেন, যিনি তাঁর বক্তব্যে নারী সুরক্ষা, মর্যাদা ও নেতৃত্বের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি সমাজকে অনুরোধ জানান নারীদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে যে-কোনও প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এবং প্রত্যেক কন্যাশিশুকে তাঁর স্বপ্নপূরণের সমান সুযোগ করে দিতে।

কাছাড়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের এক দশক উদযাপনে শিলচরে নারী দিবস পালন

অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল সমাজে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিত্বদের সংবর্ধনা প্রদান। এই গৌরবময় সম্মাননা লাভ করেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ তনুশ্রী দেব গুপ্ত, বরাক উপত্যকার প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী অনুসুয়া মজুমদার, অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জয়শ্রী দে, নিরঞ্জন পাল ইনস্টিটিউটের সুনন্দা চৌধুরী এবং কাছাড় জেলা পরিষদের ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার রঞ্জিত দত্ত।

কাছাড়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের এক দশক উদযাপনে শিলচরে নারী দিবস পালন

সহকারী কমিশনার ও সমাজকল্যাণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অঞ্জলি কুমারী তাঁর ভাষণে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের সুদূরপ্রসারী প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে এই প্রকল্প নীতিগত কাঠামোর গণ্ডি পেরিয়ে বাস্তব জীবনে কন্যাশিশুদের শিক্ষাক্ষেত্রে, ক্রীড়াঙ্গনে ও পেশাদার জীবনে সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করছে। তিনি সরকার ও সমাজের সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর গুরুত্ব দেন, যাতে প্রতিটি কন্যাশিশু তার প্রাপ্য সুযোগ পায় এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। কাছাড় জেলা পরিষদের ডেপুটি সিইও, রঞ্জিত দত্ত কাছাড়ে নয় বছর ধরে কাছ করার সুবাদে সুন্দরভাবে বাংলা ভাষায় বক্তব্য রাখেন।

কাছাড়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের এক দশক উদযাপনে শিলচরে নারী দিবস পালন

তিনি বলেন, মহিলা সাবলীকরণে অসম সরকার একাধিক প্রকল্প চালু করেছে। আসাম রাজ্য গ্রামীণ মহিলা জীবীকা অভিযান প্রকল্প বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোগকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক উত্তরণ সহ সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ করছে রাজ্য সরকার। তিনি একইসঙ্গে ভারত সরকারের অর্থানুকুল্যে বিভিন্ন পেনশন স্কিম ইত্যাদি সম্মন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। আসামে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগ এবং সমাজ কল্যাণ বিভাগ বিভিন্ন প্রকল্পের যৌথ বাস্তবায়নে কাজ করছে বলে জানান তিনি। এদিন অনুষ্ঠানে রঞ্জিত দত্ত আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের পুণ্যলগ্নে মহিলা সাবলীকরণ বিষয়ক স্বরচিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

কাছাড়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের এক দশক উদযাপনে শিলচরে নারী দিবস পালন

এই অনুষ্ঠানে আলোচনার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে নারীদের সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলা সংক্রান্ত অবদানকেও বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী অনুসুয়া মজুমদার সঙ্গীত ও শিল্পকলার মাধ্যমে সমাজে নারীর অবস্থান পরিবর্তনের গুরুত্ব সম্পর্কে কথা বলেন। তিনি সাহিত্যে, চলচ্চিত্রে ও অভিনয় শিল্পে নারীদের কণ্ঠস্বরকে আরও প্রবল করে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন, যাতে সমাজে নারীশক্তির প্রকৃত স্বীকৃতি মেলে।

কাছাড়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের এক দশক উদযাপনে শিলচরে নারী দিবস পালন

অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জয়শ্রী দে নারীর প্রকৃত ক্ষমতায়নের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার, শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে তাদের মতামত সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করা হলে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

কাছাড়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের এক দশক উদযাপনে শিলচরে নারী দিবস পালন

অনুষ্ঠানের অন্যতম বিশেষ মুহূর্ত ছিল দৃষ্টিহীন শিল্পী রুদ্রাণী দাসের হৃদয়ছোঁয়া সংগীত পরিবেশনা, যা দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে তোলে। এই অনুষ্ঠানে তাঁর নতুন মিউজিক অ্যালবামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়, যা তাঁর সঙ্গীত জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ২০২৩ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগীত ক্ষেত্রে অসামান্য কৃতিত্বের জন্য সম্মানিত হওয়া রুদ্রাণী প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে চলেছেন যে প্রতিভার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।

কাছাড়ে ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্পের এক দশক উদযাপনে শিলচরে নারী দিবস পালন

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পেশার মহিলা, পুলিশ  কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, আশা ও এএনএম কর্মী, আঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সহায়ক, অসম রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা মিশনের সখিরা এবং অন্যান্য পেশাদারদেরও বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাঁদের নিরলস পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সকলে নারী-পুরুষ সমতার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেন এবং প্রতিটি কন্যাশিশুর জন্য শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন। এই মহান উপলক্ষ্যে নারীর অধিকার রক্ষার জন্য একত্রে কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করা হয়।

Author

Spread the News