দঃ সৈদপুরে স্ত্রী হত্যাকাণ্ড : দ্রুত বিচারে স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
বরাক তরঙ্গ, ৪ এপ্রিল : কাছাড় জেলার সোনাই থানার অন্তর্গত দক্ষিণ সৈদপুর জিপির শিলডুবি এলাকায় সংঘটিত নৃশংস গৃহবধূ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত স্বামী আনোয়ার হোসেন বড়ভূইয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে কাছাড় জেলা আদালত। ২০২৪ সালের ২২ জুলাই এই লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল, যেখানে দুই সন্তানের জননী আলিফা বেগম বড়ভূইয়াকে (২৯) তাঁর স্বামী আনোয়ার হোসেন (৩২) ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছিল।
ঘটনার আগের দিন আলিফা বেগম তাঁর অসুস্থ বাবাকে দেখতে বাবার বাড়িতে যান এবং রাতেই সেখানে ছিলেন। পরদিন সকালে স্বামী আনোয়ার তাঁকে ফোন করে বাড়িতে ডাকেন। দুই সন্তানকে নিয়ে আলিফা বাড়ি পৌঁছালে তাদের মধ্যে কোনও একটি বিষয় নিয়ে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও পরে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। অভিযোগ, সন্তানদের চোখের সামনেই আনোয়ার হোসেন দা দিয়ে তাঁর স্ত্রীর ঘাড়ে উপর্যুপরি আঘাত করেন। গুরুতর আহত আলিফা ঘর থেকে বেরিয়ে আঙ্গিনায় লুটিয়ে পড়লে সেখানেও তাঁকে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। প্রতিবেশীরা বাধা দিতে এলে আনোয়ার তাঁদের দিকেও দা নিয়ে তেড়ে আসেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই আলিফার মৃত্যু হয়।
ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান সোনাই থানার তৎকালীন ডব্লিউ এসআই মৌমিতা নাথ এবং সোনাই থানার ওসি অভিজিৎ কুমার বরুয়া। ম্যাজিস্ট্রেট ও সোনাই উন্নয়ন খণ্ডের আধিকারিক মোহাম্মদ মুবিনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শিলচর মেডিক্যাল কলেজে প্রেরণ করে।

এদিকে, ঘটনার পর স্থানীয় জনতার রোষের শিকার হওয়ার ভয়ে আনোয়ার হোসেন পালিয়ে গিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করেন এবং স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর সোনাই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। স্থানীয় বিভিন্ন মহল থেকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও ঘাতকের কঠোরতম শাস্তির দাবি জানানো হয়।

নিহত আলিফার বাবার বাড়ির তরফে আনোয়ার হোসেনকে অভিযুক্ত করে সোনাই থানায় ১১৭/২০২৩ নং মামলা দায়ের করা হয়। ওসি অভিজিৎ বরুয়ার তত্ত্বাবধানে মামলার তদন্তভার নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করেন এসআই মৌমিতা নাথ। তাঁর দাখিল করা চার্জশিটের ভিত্তিতে আদালত দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। বৃহস্পতিবার মামলার শুনানিতে আদালত অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন বড়ভূইয়াকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। এই রায় ঘোষণার পর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ডব্লিউ এস আই মৌমিতা নাথকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এছাড়াও, দ্রুত ন্যায়বিচার প্রদানে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য এলাকাবাসীও তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। দুই সন্তানের জননীকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে স্বামীর এই শাস্তি নিঃসন্দেহে এলাকায় স্বস্তি এনেছে এবং আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও সুদৃঢ় করেছে।