পশ্চিম কার্বি উত্তপ্ত : এক প্রতিবাদকারীর মৃত্যু, বদলি এএসপি, বন্ধ ইন্টারনেট

বরাক তরঙ্গ, ২৩ ডিসেম্বর : কার্বি আংলং জেলার খেরনি এলাকা থেকে উদ্বেগজনক খবর সামনে এসেছে। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় একজন প্রতিবাদকারীর মৃত্যু হয়েছে এবং আরও দু’জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। মৃত ব্যক্তির পরিচয় এখনও জানা যায়নি। ‘প্রতিদিন টাইম’ সূত্রে জানা যায়, খেরনি মডেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদকারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও দু’জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রতিদিন টাইমের স্থানীয় সাংবাদিক কনক দেওরি ফোনে জানিয়েছেন, গুরুতর আহত দু’জনের মধ্যে একজন হলেন টিংখি টিমুং, যিনি বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

এ দিকে, পশ্চিম কার্বি আংলংয়ের এএসপি ফাইজ আহমদ বড়ভুইয়াকে বদলি করে কোকরাঝাড়ে অবস্থিত সপ্তম এপিবিএনে (7th APBN) নিয়োগ করা হয়েছে। অপরদিকে, লখিমপুরের এপিএস নয়ন মণি বর্মনকে বদলি করে পশ্চিম কার্বি আংলংয়ে পাঠানো হয়েছে এবং তিনি সেখানে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সাম্প্রতিক প্রতিবাদ ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সৃষ্ট অস্থিরতার জেরে জেলাজুড়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় এই প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হওয়া রোধে সাধারণ মানুষকে শান্তি বজায় রাখার পাশাপাশি পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন।

এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে অসমের পশ্চিম কার্বি আংলং জেলায় ফের উত্তেজনা ছড়ানোর খবর পাওয়া গেছে। সকালে নতুন কোনও হিংসাত্মক ঘটনার খবর নেই বলে পুলিশ দাবি করলেও, পরে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার খবর আসে। বিশেষ করে খেরনি এলাকায় একাংশ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে। খবর অনুযায়ী, প্রতিবাদকারীরা জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকায় অ-কার্বি মালিকানাধীন একাধিক দোকানে অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলমান অশান্তির মধ্যে বিহারি, নেপালি ও বাঙালিসহ অ-কার্বি সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন সম্পত্তিকে লক্ষ্য করে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অ-জনজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষজন এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে অশান্তির সময় নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। পুলিশ ও প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষে একাধিক জওয়ান ও প্রতিবাদকারী আহত হন বলে খবর। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি চালিয়েছে বলেও জানা গেছে।

মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কার্বি আংলঙের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, পিজিআর ও ভিজিআর জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে কার্বি জনগোষ্ঠী ও ওই অঞ্চলের জনজাতীয় মানুষ আন্দোলন করে আসছেন। তবে উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় আদালতের বাধা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, কার্বি জনগোষ্ঠীর একাংশের মধ্যে ধারণা রয়েছে যে কার্বি আংলঙের জনসংখ্যার মাত্র ৩৫ শতাংশ কার্বি এবং বাকি ৬৫ শতাংশ অ-জনজাতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। এই ধারণার সত্যতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন।

এদিকে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের আশঙ্কা, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে উসকানিমূলক বার্তা ও গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। তাই শান্তি বজায় রাখতে কার্বি আংলং ও পশ্চিম কার্বি আংলং জেলার সমস্ত মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারীর ইন্টারনেট ও মোবাইল ডাটা পরিষেবা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, এই সময়ে ভয়েস কল এবং ফিক্সড টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড সংযোগ চালু থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *