দেশে সিএএ কার্যকর করায় কেন্দ্র সরকারকে সাধুবাদ ভিএইচপির
বরাক তরঙ্গ, ১২ মার্চ : ইদানিং সিএএ বিরোধী ষোলটি দল সংগঠন একত্রিত ভাবে যখন বিরোধিতা করেছিল, তখনই লোকসভা নির্বাচনের আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংক্ষেপে সিএএ কার্যকর করার জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে জোরালো ভাবে আহ্বান জানিয়েছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, অধিবক্তা পরিষদ, নেলেক সহ আরো বিভিন্ন দল সংগঠন। সুদীর্ঘ ছয় যুগের প্রতীক্ষার পর অবশেষে সোমবার ভারতীয় জনতা পার্টি পরিচালিত কেন্দ্র সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সারা ভারতে এক যোগে কার্যকর করেছে। এনিয়ে মঙ্গলবার শিলচরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দক্ষিণ পূর্ব প্রান্ত সভাপতি শান্তনু নায়েক কেন্দ্র সরকারকে সাধুবাদ জ্ঞাপন করেন।
কংগ্রেসের কথা একটাই দেশ গোল্লায় যাক, গোল্লায় যেতে দাও, আমরা শুধু সুখে শান্তিতে থাকতে চাই : শান্তনু নায়েক___
শান্তনু নায়েক বলেন, অনেক আগেই এই বিল পার্লামেন্টে পাস হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রুলস ফ্রেম না হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকেই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর হচ্ছিল না। কেন্দ্র সরকার আইনটি বলবৎ করার জন্য শান্তনু নায়েক কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে তিনি আরও জানান, অধিবক্তা পরিষদ নথিপত্রের দায়িত্ব সামলেছিল। যখন সিএএ পার্লামেন্টে তোলা হচ্ছিল না, তখন ২০১২ সালে অধিবক্তা পরিষদের স্বজন ও অন্য একটি সামাজিক সংগঠন , এর সভাপতি ছিলেন নিহাররঞ্জন দাস এবং বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশন সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছিল। বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা আফগানিস্থান থেকে যারা ধর্ম রক্ষার্থে ভারতবর্ষে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদেরকে যেন নাগরিকতা প্রদান করা হয়। এনিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। শান্তনুবাবু বলেন, প্রত্যেকের সহযোগিতায় সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে কেন্দ্রে বিজেপি শাসিত সরকার অধিষ্ঠিত হয়। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে যে সকল সংখ্যালঘু বিতাড়িত হয়ে আসছেন, তাদের জন্য একটা চিন্তা ধারা চলছে।
প্রান্ত সভাপতি শান্তনু নায়েক আরও জানান, শিলচরে যখন যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটি এসেছিল, তখন ফের ২০১৮ সালে অধিবক্তা পরিষদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করা হয়। তিনি জানান, নেলেক এর এক প্রতিনিধি দল কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রী রাজনাথ সিং, ন্যাশনাল জেনারেল সেক্রেটারি রাম মাধব জি, জার্নাল ভিকে সিং এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। সম্মান ও প্রাণ রক্ষার্থে তারা যদি ভারতে আসে,তাহলে কিভাবে তাদেরকে নাগরিকতা প্রদান করা যাবে, এনিয়ে বিস্তর আলোচনা করেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল সহ বিভিন্ন মন্ত্রী, আমলাদের সাথে সময়ে সময়ে দেখা করে আলোচনা, স্মারকপত্র প্রদান ইত্যাদি করেন।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রান্ত সভাপতি শান্তনু নায়েক বলেন, নেলেক, অধিবক্তা পরিষদ ছাড়াও আরো বিভিন্ন সংগঠন এনিয়ে সরব হয়েছিল। তিনি জানান, সিএএ অ্যাক্ট পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর তিনি সহ শুভ্রাংশুশেখর ভট্টাচার্যকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়। অনুরূপ গুয়াহাটি থেকে দুজন, পশ্চিম বাংলা থেকে আরও দুজনকে দিল্লি ডেকে পাঠানো হয়। সেখানে কেন্দ্র সরকাররের আধিকারীরা নাগরিক সংশোধনী আইনকে আইনে পরিণত করতে নিয়ম, শর্ত ইত্যাদি বিষয়ে তাদের কাছ থেকে পরমার্শ নিয়েছিলেন বলে শান্তনু নায়েক জানান।
তাঁর কথায়, সিএএ মানে সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট। এবার সবচাইতে বড় প্রশ্ন হল এই সিএএ বিষয়টা কি। অর্থাৎ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন যার মানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে যে সমস্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি এবং শিখ সম্প্রদায়ের লোকেরা একমাত্র ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হয়ে ভারতবর্ষে আসতে বাধ্য হয়েছিল তাদেরকে নাগরিকতা প্রদান করবার এক আইন মাত্র। আর এই আইন ১৯৫৫ সালেই তৎকালীন কংগ্রেস সরকার কর্তৃক রচনা করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখের কথা একমাত্র তুষ্টিকরণের রাজনীতির জন্যই তারা এই আইন বলবৎ করেনি। কংগ্রেস সরকারের যুক্তি ছিল এবং এখনো আছে, এই আইন বলবৎ করলে দেশের মধ্যে একটা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যাবে, উশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়ে যাবে, সাম্প্রদায়িক সোহার্দ্য নষ্ট হয়ে যাবে ইত্যাদি সব উল্টো পাল্টা যুক্তি তর্কের কথা। আর আমরা সবাই খুব ভালো করেই জানি ভয়ের রাজনীতিতে দেশ বিভাজনকারী তথা দেশ বিরোধী কংগ্রেস সরকারের জুড়ি মেলা ভার! তাদের রাজনীতির মূল কথাই হল অল্প সংখ্যককে কিরকম ভাবে খুশি রেখে বৃহত্তর জনসংখ্যার জনগণকে চাপিয়ে রাখা যায়, দমিয়ে রাখা যায়, উৎপীড়ণ করা যায়, বঞ্চিত করা যায়, শোষণ করা যায়, লাঞ্ছনা দেওয়া যায়, ধর্মীয় ভাবাবেগে কিভাবে আঘাত করা যায় এক কথায় দমবন্ধকর পরিবেশ তৈরি করাই যায়। এসবই ছিল তাদের মূল এজেন্ডা এবং এখনো কংগ্রেস সরকার এই এজেন্ডাই কাজ করে চলেছে আর আগামী দিনও এই অল্প সংখ্যক এর রাজনীতির এজেন্ডা তারা চালিয়ে রাখবে মানে জিইয়ে রাখবে। কংগ্রেসের কথা একটাই দেশ গোল্লায় যাক, গোল্লায় যেতে দাও আমরা শুধু সুখে শান্তিতে থাকতে চাই।
যাইহোক, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্যাতনের বলি হয়ে যারা ভারতবর্ষে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন, তারা এবারে নাগরিকতা পাবেন। এটাই শান্তনুবাবুর কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা বলে উল্লেখ করে তিনি কেন্দ্র সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রান্ত প্রচার ও প্রসার প্রমুখ শমীন্দ্র পাল এক প্রেসবার্তায় এখবর জানিয়েছেন।