বৃষ্টি-বাদল নেই হঠাৎ ঘরের উপর ধসে পড়ল টিলা, আহত ৪, আশঙ্কাজনক শিশু ধলাইয়ে

রাজীব মজুমদার, ধলাই।
বরাক তরঙ্গ, ৩১ মার্চ : বৃষ্টি-বাদল নেই হঠাৎ এমন এক বিপর্যয় ঘটল দক্ষিণ ধলাইয়ের রাজগোবিন্দপুর গ্রামে। রবিবার মধ্যরাতে এক ভয়াবহ টিলা ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাত প্রায় ১২টা নাগাদ রাজগোবিন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা মহেশ দাসের ঘরের উপর পাশের টিলা ধসে পড়লে একই পরিবারের চারজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মহেশ দাসের দশ বছর বয়সী কন্যাশিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। আহত সকলকে দ্রুত উদ্ধার করে ধলাই হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
জানা যায়, হতদরিদ্র মহেশ দাস তার সন্তানদের নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন। ঠিক সেই সময় তাদের টিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি অস্থায়ী ঘরের উপর আকস্মিকভাবে ধসে পড়ে ঘরের পাশে থাকা টিলাভূমি। মুহূর্তের মধ্যে মাটির নিচে চাপা পড়ে যান সকলে। গৃহকর্তা মহেশ দাসের গলা থেকে নিচ পর্যন্ত মাটি চাপা পড়লে তিনি বাঁচার জন্য চিৎকার করতে শুরু করেন। তার আর্তচিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। স্থানীয় লোকজন দীর্ঘক্ষণ ধরে চেষ্টা চালিয়ে মহেশ সহ তিনজনকে মাটি চাপা অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
তবে, উদ্ধারের পর মহেশ তার দশ বছর বয়সী মে তানিস দাসকে খুঁজে না পাওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সকলে মিলে ফের মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। দীর্ঘ চেষ্টার পর অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় শিশুকন্যা তানিস। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত একটি অটো করে আহতদের হাসপাতালে পাঠান।
শারীরিকভাবে অক্ষম মহেশ দাস সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে একটি নতুন ঘর তৈরির অনুমোদন পেয়েছিলেন। সেই কারণে তিনি পুরনো বাড়ির পাশেই তিন দিক থেকে টিলা কেটে নতুন ঘর নির্মাণ করছিলেন। দুর্ঘটনার রাতে তারা অস্থায়ীভাবে নির্মিত টিনের ঘরেই ঘুমোচ্ছিলেন। ঝড় বৃষ্টি ছাড়া আকস্মিক টিলার মাটি ধসে তাদের ঘরের উপর আছড়ে পড়ে। এই মর্মান্তিক ঘটনার খবর পেয়ে ধলাই থানার এএসআই সন্তোষ কুমার দাস পুলিশ দল নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে নির্মিতব্য ঘরটি অত্যন্ত অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিকে উঁচু টিলা রেখে মধ্যখানে ঘর নির্মাণ করায় যে কোন সময় ভূমিধসের কবলে পড়ার আশঙ্কা ছিল। স্থানীয়দের মতে, এমন বিপজ্জনক স্থানে ঘর বানানোর সিদ্ধান্ত নির্বুদ্ধিতার পরিচয়। আহতরা শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, গৃহকর্তা মহেশ এর আগে দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে তার অঙ্গহানি ঘটেছে। বর্তমান সময়ে তিনি একজন বিকলাঙ্গ ব্যক্তি। অত্যন্ত কষ্টে নিজে বেঁচে থাকার পাশাপাশি স্ত্রী সন্তানদের ভরণ পোষণ দিয়ে আসছেন। আজ তার পরিবারে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে যাওয়ায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।