মা-বাবাকে টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দিল ছেলে

১৯ ডিসেম্বর : যে পুত্রকে মানুষ করতে বাবা-মা সারাজীবনের পুঁজি ঢেলে দিয়েছিলেন, সেই পুত্রের হাতেই শেষ পর্যন্ত প্রাণ দিতে হল তাঁদের! নিছক কোনও সাধারণ খুন নয়, নৃশংসতার সব সীমা ছাড়িয়ে মা-বাবাকে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল ছেলে অম্বেশের বিরুদ্ধে। ৫ দিনের রুদ্ধশ্বাস তল্লাশির পর অবশেষে বৃহস্পতিবার এই হাড়হিম করা ঘটনার রহস্যভেদ করল পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের আহমেদপুর গ্রামে।

তদন্তে উঠে এসেছে, এই মর্মান্তিক পরিণতির মূলে ছিল দীর্ঘদিনের পারিবারিক অশান্তি। কোভিড অতিমারির সময় কলকাতায় এক মুসলিম তরুণীকে বিয়ে করেন অম্বেশ। ভিনধর্মী এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি তাঁর পরিবার। শুরু হয় টানাপোড়েন। অন্যদিকে, স্ত্রীর খোরপোশ মেটাতে গিয়ে বাবা-মায়ের ওপর টাকার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন অম্বেশ। জমিজমা ও টাকা নিয়ে বিবাদ চরমে পৌঁছালে তিন মাস আগে কলকাতা থেকে একা ফিরে আহমেদপুরে থাকতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু তাতেও অশান্তি কমেনি।

পুলিশি জেরা ও অপরাধস্থল পুনর্নির্মাণে যা উঠে এসেছে তা যেকোনও ক্রাইম থ্রিলারকেও হার মানাবে। গত ৮ ডিসেম্বর রাতে বচসা চলাকালীন লোহার রড দিয়ে মা ববিতার (৬৩) মাথায় আঘাত করেন অম্বেশ। দ্বিতীয় খুন হল মা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বাবা শ্যাম বাহাদুর (৬৫) চিৎকার করার চেষ্টা করেন। অম্বেশ তাঁকেও বেধড়ক মারধর করে দড়ি দিয়ে গলা টিপে হত্যা করেন।

দেহ লোপাট করতে বাড়ির নিচে চলতে থাকা নির্মাণকাজের করাত দিয়ে মা-বাবার দেহ তিনটি করে খণ্ডে বিভক্ত করেন তিনি। মোট ছয়টি সিমেন্টের বস্তায় সেই দেহাংশগুলি ভরা হয়।

খুনের পর নিজের গাড়িতে বস্তাগুলো বোঝাই করেন অম্বেশ। এরপর গোমতী নদীতে অধিকাংশ দেহাংশ ফেলে দিলেও মায়ের একটি অঙ্গ ব্যাগে না ধরায় বারাণসী যাওয়ার পথে সেটি সই নদীতে ফেলে দেন তিনি।

নিহত দম্পতির মেয়ে বন্দনা গত ১৩ ডিসেম্বর বাবা-মা ও ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তদন্তে নেমে পুলিশ অম্বেশের গতিবিধিতে সন্দেহ প্রকাশ করে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় বারবার বয়ান বদল করলেও পুলিশের ম্যারাথন জেরার মুখে শেষমেশ ভেঙে পড়েন অম্বেশ। স্বীকার করেন নিজের অপরাধের কথা।

জৌনপুরের উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক আয়ুষ শ্রীবাস্তব জানান, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডুবুরি নামিয়ে নদী থেকে দেহাংশ উদ্ধারের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই একটি খণ্ডিত দেহাংশ উদ্ধার হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *