টেন্ডার ছাড়াই পরিত্যক্ত সেতুর লোহার জয়েস্ট কাটা চলছে উধারবন্দে
বরাক তরঙ্গ, ১০ ফেব্রুয়ারি : উধারবন্দে তুঘলকি এক কাণ্ডে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি টেন্ডার ছাড়াই পরিত্যক্ত সেতুর লোহার জয়েস্ট কাটা শুরু হল উধারবন্দে। বিষয়টির সঙ্গে খোদ বিধায়ক মিহিরকান্তি সোমের নাম জড়িয়ে পড়ায় এর পেছনে গভীর রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা।
প্রসঙ্গত, প্রায় দেড় দশক আগে কংগ্রেস আমলে উধারবন্দ বাজারঘাটে পুরনো কাঠ ও লোহার সেতুর জায়গায় নয়া আরসিসি সেতু চালু হয়। নয়া সেতু চালুর পর পুরনো সেতুর কাঠ চুরি করে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। কিছু কিছু ইস্পাত-লোহার অংশও হাপিস করে চোরেরা। কিন্তু সচেতন মানুষ বিভিন্ন সময় চুরিতে বাধা সৃষ্টি করেন। এর ফলে রক্ষা পায় সেতুটির লোহার মূল কাঠামো। এরপর অনেকগুলো বছর অতিক্রান্ত। এখনও লোহার সেতু পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি কোনও ধরনের সরকারি টেন্ডার ছাড়াই লোহার জয়েস্ট কাটা শুরু করা হয়েছে বিধায়ক মিহিরকান্তি সোমের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে। গত ২০ তারিখে পূর্ত বিভাগের রোড ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে বিধায়ক এক চিঠি লিখেন পরিত্যক্ত সেতু ভেঙে ফেলার জন্য।
চিঠিতে বিধায়ক উল্লেখ করেন, ওই পুরনো সেতুর লোহা কোনও মেরামতের কাজে লাগতে পারে। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ জানুয়ারি পূর্ত বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অনিরুদ্ধ নাগ উধারবন্দের বিডিওকে চিঠির মাধ্যমে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ করতে বলেন। বলা হয় যাতে ৯০ মিটার দীর্ঘ এবং ৪ মিটার চওড়া পুরনো পরিত্যক্ত সেতুটির লোহা তিনি সমঝে নেন যা পরবর্তীতে উধারবন্দ এলাকারই কোনও উন্নয়নমূলক কাজে লাগানো হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পূর্ত বিভাগ কেন এতদিন এই পরিত্যক্ত সেতুর বিপুল পরিমাণ লোহা বিক্রি করার ক্ষেত্রে কোনও টেন্ডার দিল না। কেনই বা বিধায়ক মিহিরকান্তি সোমের এ ব্যাপারে এত আগ্রহ। একটি মহল মনে করছেন, শাসকদলের কিছু ব্যক্তির মাধ্যমে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট লোহার অবৈধ ব্যবসা করতে চাইছে।

এনিয়ে উধারবন্দের বিডিও কুবাদ আহমদ চৌধুরীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেতু ‘ডিসমেন্টাল’ করার ক্ষেত্রে যাবতীয় ‘নিয়ম’ রক্ষা করা হচ্ছে এবং খোদ পূর্ত বিভাগ এ ব্যাপারে অবহিত আছে। তবে প্রশ্ন এখন একটাই ঘুরপাক খাচ্ছে, দীর্ঘদিন থেকে পরিত্যক্ত সেতুটি ডিসমেন্টালিং করাতে কেন সংশ্লিষ্ট পূর্ত বিভাগ নিয়ম অনুসারে যথাসময়ে টেন্ডার দিল না। কেনই বা হঠাৎ বিধায়কের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এটির লোহা কাটানোর অর্ডার জারি করা হল। পাশাপাশি যেখানে পরিত্যক্ত সরকারি সম্পত্তির নিলাম করা জরুরি, এখানে সেটাও হচ্ছে না। গোটা বিষয়টি বিধায়ক, ইঞ্জিনিয়ার এবং বিডিওর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এর মধ্যে গভীর রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন মানুষ।

একটি সূত্রে জানা গেছে, বিধায়ককে এই সেতু ভাঙার জন্য চাপ সৃষ্টি করছিল শাসকদলের একটি মহল। এদের উপার্জনের সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি এর ‘বখরা’ অন্যান্যদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করার সুযোগ করে দেওয়ার একটা তাগিদ এখানে কাজ করছে। ঘটনাটি নিয়ে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে উধারবন্দ ব্লক কংগ্রসের এক প্রতিনিধি দল বিডিওর সঙ্গে দেখা করে সার্বিক বিষয়ে ক্ষোভব্যক্ত করে। উল্লেখ্য, পুরনো সেতুতে যেসব জয়েস্ট রয়েছে, তার বাজারমূল্য কয়েক লক্ষ টাকা হবে।