অনির্দিষ্টকালের জন্য কসবার আইন কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত গর্ভনিং বডির
১ জুলাই : অনির্দিষ্টকালের জন্য কসবার আইন কলেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল গর্ভনিং বডি। ইতিমধ্যেই কলেজের ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। যতদিন না গভর্নিং বডি এই বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, ততদিন কলেজের সমস্ত ক্লাস বন্ধই থাকবে। রবিবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একথা জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সোমবার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়ারা। তাঁদের দাবি, কলেজের পড়াশোনা এবং নিরাপত্তা অবিলম্বে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই মর্মে কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটি ডেপুটেশন দেওয়ারও পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তাঁরা। তবে ভাইস প্রিন্সিপাল কলেজে উপস্থিত না থাকায়, বিভাগীয় প্রধানকেই এই ডেপুটেশন জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন পড়ুয়ারা।
এখন এই কলেজে প্রবেশ করতে গেলে চোখে পড়বে একাধিক সিসি ক্যামেরা। তবে পড়ুয়াদের অভিযোগ, এতগুলো ক্যামেরা আগে কলেজে ছিল না। বিল্ডিংয়ের ভিতরেও ক্যামেরা নেই বলে দাবি পড়ুয়াদের। পড়ুয়াদের অভিযোগ, কলেজে তাঁরা সুরক্ষিত নন এবং রীতিমতো আতঙ্কে থাকেন। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য দাবিপত্রে একাধিক বিষয় তুলে ধরেছেন পড়ুয়ারা।
সোমবার আইনের ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন কসবায়। গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির পাশাপাশি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। কলেজের পড়ুয়ারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে ক্যাম্পাসে জমায়েত করেন। কিন্তু উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে অভিযোগ। তাঁরা উপাচার্যকে দেওয়ার জন্য একটি ডেপুটেশন তৈরি করেছেন।
কলকাতার ১০ থেকে ১২টি আইন কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং প্রাক্তনীরা সোমবার সকালে কসবায় জড়ো হয়েছিলেন। দুষ্কৃতীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কসবা থানা থেকে আইন কলেজ পর্যন্ত হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল করেন তাঁরা। অভিযোগ, কলেজে যে কেউ ঢুকে পড়েন, রক্ষী পরিচয়পত্র দেখেন না অনেক ক্ষেত্রেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে প্রথম থেকেই উদাসীন বলে দাবি করেছেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ।
কলেজের বর্তমান পড়ুয়া দেবদ্যুতি সেনগুপ্ত বলেন, ‘প্রথম বর্ষ থেকে পঞ্চম বর্ষ পর্যন্ত, আমরা সকলেই এখানে জড়ো হয়েছি। কলেজে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কর্তৃপক্ষের কাছে তাই ডেপুটেশন জমা দিতে চাই। কিন্তু উপাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি আসতে পারবেন না।’ ওই কলেজের চতুর্থ বর্ষের আর এক ছাত্রী জোয়া আলম বলেন, ‘আমাদের কলেজের নিরাপত্তারক্ষী কারও কার্ড দেখেন না। দীর্ঘদিন কলেজে সেমিনার হয়নি।’
আইন কলেজের বর্তমান পড়ুয়াদের দাবি, যৌন হয়রানির তদন্তের জন্য পৃথক সেল গঠন, অভিযুক্তের অবিলম্বে বরখাস্ত করে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ, মহিলা নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ, বিকাল ৪টার পর কলেজে পড়ুয়াদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা, স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন। এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য সমস্ত সাধারণ এলাকা, করিডোরে সিসিটিভি বসানোর দাবি তুলেছেন বর্তমান পড়ুয়ারা।
এদিকে, গত বুধবার রাতে কলেজে ছাত্রীর গণধর্ষণের যে ভিডিওগুলি তোলা হয়, সেগুলি একটি সোশাল মিডিয়ার বিশেষ গ্রুপে শেয়ার করা হয়েছিল বলে খবর এসেছে পুলিশের কাছে। পুলিশ সেই তথ্য যাচাই করছে। ওই গ্রুপে রয়েছেন তিন অভিযুক্ত এবং তাঁদের খুব ঘনিষ্ঠ কয়েকজন। ওই গ্রুপের কেউ বাইরে ভিডিওগুলি ছড়িয়েছে কি না, সেই তথ্য পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। তথ্য যাচাইয়ের জন্য গ্রুপের অন্য সদস্যদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
