হাইলাকান্দিতে নিযুক্তি পরীক্ষা কেন্দ্রের দাবিতে সাহাবাদে আমরণ অনশন ছাত্রমুক্তির
এডিসির উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের আশ্বাসে সাময়িক প্রত্যাহার অনশন____
এবি লস্কর, লালা।
বরাক তরঙ্গ, ৩১ জুলাই : তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিযুক্তি পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বঞ্চিত হাইলাকান্দি। বরাকের দুই জেলায় পরীক্ষাকেন্দ্র থাকলেও উপেক্ষিত হাইলাকান্দি জেলা। হাইলাকান্দির চাকরি আবেদনকারীদের জন্য শিলচর বা করিমগঞ্জে নয়, হাইলাকান্দিতেই পরীক্ষাকেন্দ্রে স্থাপনের দাবিতে জেলার সাহাবাদ বাজারে আমরণ অনশন শুরু করল ছাত্রমুক্তি সংগ্রাম সমিতি। বুধবার সকাল ১১ টায় সাহাবাদ বাজারে ছাত্র মুক্তির শতাধিক নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন দল-সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। যদিও সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ এডিসি অমিত পারবশা উপস্থিত হয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করার আহ্বান জানালে আমরণ অনশন সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়।
এদিন, রাইজর দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন লস্কর, কৃষক মুক্তির জেলা সভাপতি হিমাংশু গোস্বামী, সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন লস্কর, ছাত্র মুক্তির জেলা সভাপতি জহিরুল ইসলাম মজুমদার, সম্পাদক খাইরুল ইসলাম বড়ভূইয়া প্রমুখ নেতৃত্বে শতাধিক ছাত্র মুক্তির নেতা-কর্মী আমরণ অনশনে বসেন।
তাঁরা ‘হাইলাকান্দিতে পরীক্ষার সেন্টার দিতে হবে’, ‘নিযুক্তি পরীক্ষার সেন্টার থেকে হাইলাকান্দি জেলাকে বঞ্চিত করা মানছি না, মানবো না’, প্রভৃতি শ্লোগান দিয়ে পরিবেশ উত্তাল করে তোলেন। অনশন স্থলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাইজর দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন লস্কর বলেন, জেলার জনপ্রতিনিধিদের অকর্মণ্যতার ফলে হাইলাকান্দি জেলা বারবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে। যদিও তিনি এও জানিয়ে বলেন, আন্দোলন ছাড়া হাইলাকান্দির কোনো সমস্যা সমাধান হয়নি। তাই আন্দোলনের মাধ্যমে পরীক্ষা কেন্দ্রও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আদায় করতে হবে।
জহির উদ্দিন লস্কর বলেন, আমরণ অনশনের পাশাপাশি তাঁরা জেলাজুড়ে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন কার্যসূচী রূপায়ন করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবেন। তিনি বলেন, দক্ষিণ হাইলাকান্দির একেকজন পরীক্ষার্থী শিলচর গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতে ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তাছাড়া যানজটে পড়ে অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতেও পারে না। তাই পরীক্ষার সেন্টার যেকোনো মূল্য আদায় করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর বলে জানান জহির উদ্দিন লস্কর।
এদিন, কৃষক মুক্তির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন লস্কর বলেন, হাইলাকান্দি জেলাকে যেভাবে তিনটি সমষ্টি থেকে দুটি সমষ্টি বানিয়ে রাজনৈতিকভাবে পঙ্গু করা হয়েছে। ঠিক একইভাবে চাকরির ক্ষেত্রেও জেলার মেধাবী পড়ুয়াদের বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। অনশন স্থলে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা পারভেজ খসরু লস্কর, যুবনেতা রাজন লস্কর, যুব কংগ্রেস নেতা মন্টু মজুমদার, কৃষক মুক্তির প্রচার সম্পাদক আফজল হুসেন তাপাদার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, এদিন বিকেল তিনটা নাগাদ কাটলিছড়ার সার্কল অফিসার মৃগাক্ষী দাস অনশন স্থলে উপস্থিত হয়ে অনশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ করলেও ছাত্র মুক্তির নেতৃবর্গরা তা মেনে নেননি। তাঁরা জেলা আয়ুক্তের উপস্থিতি দাবি করে অনশনে অনড় থাকেন। এদিকে, জেলাশাসক হিবারে নিসর্গ জেলার বাহিরে থাকায় জেলাশাসকের পক্ষ থেকে এডিসি অমিত পারবশা অনশন স্থলে উপস্থিত হন। তিনি অনশনকারীদের দাবির পূর্ণ মান্যতা দিয়ে বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা আয়ুক্তের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারকে অবগত না করলে সমস্যা সমাধান হবে না। তিনি বলেন, যেহেতু জেলাশাসক গুয়াহাটিতে রয়েছেন, তাই বৃহস্পতিবার জেলাশাসক আসার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক বিষয়টি নিয়ে এক ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করে রাজ্য সরকারকে অবগত করা হবে। শেষপর্যন্ত এডিসির আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ৮ ঘন্টার অনশন প্রত্যাহার করেন ছাত্র মুক্তির নেতৃবর্গরা।
এদিকে, নিযুক্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হাইলাকান্দি জেলায় দেওয়ার দাবিতে করা অনশনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে অংশ নেন হাইলাকান্দি প্রেস ক্লাবের সভাপতি নইমুল ইসলাম চৌধুরী। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নইমুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যেহেতু হাইলাকান্দিতে নিট পরীক্ষা, সিবিএসই-র মাধ্যমিক ও উচ্চতর মাধ্যমিক পরীক্ষা সুষ্টুভাবে অনুষ্ঠিত হয়। তাই নিযুক্তি পরীক্ষার সেন্টার প্রদান করা প্রয়োজন। এনিয়ে সবরকম আন্দোলনে তাঁদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলেও জানান প্রেস ক্লাবের সভাপতি নইমুল ইসলাম চৌধুরী।