বরাক বনধের ডাক, প্রদীপ দত্তরায়ের বিরুদ্ধে মামলা শ্রীভূমি পুলিশের
বরাক তরঙ্গ, ৩ এপ্রিল : বরাক বনধের ডাক দেওয়ায় বিডিএফের মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়ের বিরুদ্ধে মামলা করল শ্রীভূমি পুলিশ।
ডিলিমিটেশন করে বরাকের দুটি আসন কেটে নেওয়ার প্রতিবাদে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঘটনার দুবছর পর বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়ের বিরুদ্ধে ফের মামলা করলেন শ্রীভূমি পুলিশের কর্তারা।
মামলা নং জি আর -১৩৬৪/২০২৩ এর মাধ্যমে আগামী ৬ মে তাঁকে শ্রীভূমি জেলার কোর্টে হাজিরা দেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শ্রীভূমি পুলিশের পক্ষে এই মামলাটি করেছেন ডিএসপি গীতার্থ দেবশর্মা, এসআই লীলা প্রসাদ শর্মা ও রাতাবাড়ি থানার এসআই সুরজ দত্ত। এতে সাক্ষ্য দিয়েছেন করিমগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ রামানুজ চক্রবর্তী ও বর্তমানে হোজাই জেলায় কর্মরত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সুজিত চৌধুরী।

মামলার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে ডিলিমিটেশন করে বরাকের দুটি বিধানসভা আসন কেটে নেবার প্রতিবাদে বিগত ২০২৩ সালের ২৭ শে জুন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর পক্ষ থেকে বারো ঘণ্টা সর্বাত্মক বরাক বনধ পালনের ডাক দিয়েছিলেন প্রদীপ দত্তরায়, যা সমর্থন করেছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, সিপিআইএম, এআইইউডিএফ ও আম আদমি পার্টি। পুলিশের অভিযোগ যে এই বনধ সফল করতে তাঁর উস্কানিতে করিমগঞ্জের জনগনকে ভয় দেখানো হয়েছে, তাঁদের বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হয়নি, দোকান পাট জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আরো অভিযোগ যে পিকেটাররা নাকি সেদিন রাস্তা অবরোধ করেছে, জরুরী পরিষেবা ব্যাহত করেছে, কেউ কেউ জনগনকে হুমকি দিয়েছেন,যা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল। এমনকি একদল নাকি রেল রোকো কর্মসূচি নেবার পরিকল্পনা করেছিলেন। এসবের জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১/৫০৬/১৮৬ ধারায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
এই ব্যাপারে বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, এই প্রসঙ্গে কয়েকটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয়। যদিও এজাহারে বিডিএফ এর সাথে অন্যান্য দলের নাম রয়েছে কিন্তু বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এর নাম ছাড়া অন্য দলের কোন পদাধিকারীর নামোল্লেখ নেই। দ্বিতীয়ত কাছাড় বাদ দিয়ে শ্রীভূমি জেলা প্রশাসন থেকে এই মামলাটি করা হয়েছে। তৃতীয়তঃ ঘটনার দুবছর পর হঠাৎ করে এই মামলা করা হয়েছে। জয়দীপ বলেন, এসব থেকে এটা স্পষ্ট যে শুধুমাত্র বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ককে হেনস্থা করার জন্যই এই উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।

জয়দীপ আরও বলেন, ২০২৩ সালে সমষ্টি পুনর্বিন্যাসের অজুহাতে সম্পুর্ন অনৈতিক ভাবে বরাক উপত্যকার দুটি আসন কর্তন করা হয়,যা নিয়ে বরাকের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বরাক বনধের ডাক দেওয়া হয়েছিল বিডিএফ এর পক্ষ থেকে,যা সমর্থন করে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল। তিনি বলেন, এই বনধে জনগণের অংশগ্রহণ এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত ছিল যে বিডিএফ এর পক্ষ থেকে একজন পিকেটারকেও মাঠে নামাতে হয়নি। বরাকের সর্বত্র স্থানীয় জনগন উদ্যোগী হয়ে এই বনধকে সম্পূর্ন সফল করেছেন। তাই ভয় বা হুমকি প্রদর্শন বা কোন ধরনের জোরজবরদস্তির প্রসঙ্গ এক্ষেত্রে সম্পুর্ন মিথ্যাচার। তিনি চ্যালেঞ্জ ঠুকে বলেন যে সেরকম কোন ঠোস প্রমাণ যদি শ্রীভূমি পুলিশের হাতে থাকে তবে তাঁরা তা প্রকাশ করুক। বনধ করে জোর জবরদস্তি বা সরকারি এবং বেসরকারি সম্পত্তি হানি করলে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার কথা বিভিন্ন কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে।
তিনি অবিলম্বে শ্রীভূমি পুলিশ প্রশাসনকে এই মামলা প্রত্যাহার করে নেবার আহবান জানিয়েছেন। অন্যথা তারা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবেন বলেও এদিন জানিয়েছেন তিনি। বিডিএফ এর পক্ষ থেকে আহ্বায়ক হৃষীকেশ দে এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।