মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৫ ডিসেম্বর : এআইইউডিএফ মানেই বিজেপির পরোক্ষ শক্তি বরাক উপত্যকায় সুবিধাবাদের রাজনীতি উন্মোচন করলেন কংগ্রেস। বরাক উপত্যকার রাজনীতিতে এআইইউডিএফের ভূমিকা নিয়ে খোলাখুলি আক্রমণে নামল কংগ্রেস। করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান শাহাদাত আহমদ চৌধুরীর তীব্র বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, এআইইউডিএফ কোনও আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক শক্তি নয়, বরং বিজেপির পরোক্ষ সহযোগী একটি সুবিধাবাদী সংগঠন। জনগণের নিত্যদিনের সমস্যা, দুর্নীতি, বেকারত্ব ও উন্নয়নের ব্যর্থতা নিয়ে নীরব বলে এআইইউডিএফের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান শাহাদাত আহমদ চৌধুরী এক বৈঠকে এমনটাই বলেন, এআইইউডিএফ আদতে কোনও আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী, যাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা এবং ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করা।
শাহাদাত চৌধুরী বলেন, রাতের অন্ধকারে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা আদায় করার জন্য এআইইউডিএফ দলে নাম লিখিয়ে দিনে সভা-সমিতিতে গিয়ে কংগ্রেসের সমালোচনা করা সেটাই তাদের রাজনৈতিক চরিত্র। বাস্তবে তারা বিজেপির সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার রাজনীতি করছে, অথচ প্রকাশ্যে সংখ্যালঘুদের দরদী সাজছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত সাধারণ মানুষ। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব আজ বরাক উপত্যকার অন্যতম বড় সঙ্কট। গ্রামাঞ্চলের মানুষ জলের জন্য হাহাকার করছেন। কেন্দ্র সরকারের ঢাকঢোল পেটানো জল জীবন মিশন এই অঞ্চলে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কোটি কোটি টাকা খরচের পরেও ঘরে ঘরে জল পৌঁছায়নি। অথচ এই ইস্যুতে এআইইউডিএফ দলের পক্ষ থেকে না কোনও আন্দোলন, না কোনও গণপ্রতিবাদ—একেবারেই নীরব। কারণ, বিজেপি সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলবে এমন কোনও প্রশ্ন তুলতেই তারা ভয় পায়। শাহাদাত চৌধুরী বলেন, আজকের যুবসমাজ সবচেয়ে বেশি প্রতারিত। শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা বেকার, কর্মসংস্থানের কোনও দিশা নেই। ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা চরম হতাশায় ভুগছে। অথচ এআইইউডিএফ দল যুবকদের জন্য একটি আন্দোলনও গড়ে তুলতে পারেনি। কারণ, জনগণের সমস্যা নয়—কংগ্রেসের সমালোচনা করাই তাদের একমাত্র রাজনৈতিক কর্মসূচি।তিনি অভিযোগ করেন, বরাক উপত্যকায় আজ সিন্ডিকেট রাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি কাজ, ঠিকাদারি, নিয়োগ—সবকিছুই কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ মানুষ বঞ্চিত, কিন্তু এআইইউডিএফ দল এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলে না। কারণ, তাদের রাজনীতি “মামাকে খুশি রাখা অর্থাৎ বিজেপির সুবিধা করে দেওয়া। এই দল সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে, কিন্তু তাদের অধিকার রক্ষায় কখনও লড়াই করে না।
তিনি আরও বলেন, এআইইউডিএফ দলের সুপ্রিমো প্রকাশ্যেই বিজেপি দলের ভজনায় নিমজ্জিত। এমন একটি দল থেকে জনগণ কী আশা করতে পারে? এই দল আজ জনগণের চোখে একটি ‘প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি’ হিসেবে পরিচিত—যেখানে গণতন্ত্র নেই, আদর্শ নেই, শুধু মালিকের নির্দেশই শেষ কথা।শাহাদাত চৌধুরী বলেন, এই দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী দলের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ হয়ে ইতিমধ্যেই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। আরও অনেকেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার জন্য। এটি প্রমাণ করে এআইইউডিএফ দলের ভিত ভেঙে পড়ছে, আস্থা হারাচ্ছে।তিনি স্মরণ করিয়ে দেন ২০২৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে এআইইউডিএফ দলের সুপ্রিমো প্রকাশ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব, বিশেষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈ, এক কথায় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই সুবিধাবাদী, নীতিহীন দলের সঙ্গে কংগ্রেসের কোনও সম্পর্ক হবে না।
তিনি আরও বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে এআইইউডিএফ দলের নেতা-কর্মীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিজেপিকে সমর্থন করেছিলেন। এমনকি তাদের কিছু বিধায়কও বিজেপির পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। আজ সেই দল সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসকে দোষারোপ করছে এটি সম্পূর্ণ হাস্যকর।সবশেষে চৌধুরী বলেন, “যে দলের কোনো নীতিগত আদর্শ নেই, কোনও গণআন্দোলনের ইতিহাস নেই, কোনও ত্যাগের ঐতিহ্য নেই সেই দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মতো সর্বভারতীয়, স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দলের সমালোচনা করার নৈতিক অধিকার রাখে না। আজ জনগণ সব বুঝে গেছে কে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করছে, আর কে পর্দার আড়ালে বিজেপির সুবিধা করে দিয়ে রাজনীতি করছে।


