বিপ্লবী উল্লাস কর দত্ত স্মরণ শিলচরে
বরাক তরঙ্গ, ১৭ মে : অগ্নিযুগের মহান বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শিলচর শ্মশানে তাঁর স্মৃতিস্মারকে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার শিলচর গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠান ও প্রতিমূর্তি সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে সকাল ৮ টায় প্রথমেই বিপ্লবীর স্মৃতি স্মারকের বেদিতে প্রদীপ প্রজ্বলন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
এরপর বিভিন্ন বক্তারা স্মৃতিচারণ করে বিপ্লবী উল্লাসকরের জীবনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা তথা প্রতিমূর্তি সংরক্ষণ কমিটির সহ-সভাপতি নীহাররঞ্জন পাল বলেন, অগ্নিযুগের অগ্নিপুরুষ উল্লাসকর দত্তের বিপ্লবী জীবন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মবলিদান পর্বের গৌরবময় অধ্যায়কে আমাদের সামনে চিরভাস্বর করে তুলে। উল্লাসকর, বারীন ঘোষদের তৈরি বোমা নিয়েই ক্ষুদিরাম মজঃফরপুরে গিয়েছিলেন অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে। আলিপুর বোমা মামলার রায়ে উল্লাসকর দত্ত ও বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। এই আদেশ শুনেও উল্লাসকর সম্পূর্ণ অবিচলিত থাকেন।হাইকোর্টে আপিলে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আপ্রাণ চেষ্টায় ফাঁসির সাজা যাবজ্জীবন দীপান্তরে পরিবর্তিত হয়।দীপান্তরে সেলুলার জেলের ভিতর অমানুষিক অত্যাচারে উল্লাসকর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।এরপর তাঁকে চেন্নাই মানসিক হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। এত কিছুতেও দেশভক্তিতে অটল ছিলেন উল্লাসকর। খণ্ডিত স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করেন।
প্রতিমূর্তি সংরক্ষণ কমিটির সম্পাদক প্রবীর রায়চৌধুরী বলেন, পরিণত বয়সে কৈশোরের ভালোবাসা স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিনচন্দ্র পালের কনিষ্ঠা কন্যা বিধবা ও পঙ্গু লীলা পালকে বিবাহ করে ও সেবাযত্ন করে বিপ্লবী উল্লাসকর যে মানবিকতার নজির গড়েছেন তা বাস্তব জীবনে অতুলনীয়। শিলচরের কল্যাণী মিশ্র তাঁকে পিসেমশায় বলে সম্বোধন করতেন। কল্যাণী মিশ্রদের আগ্রহে উল্লাসকর সস্ত্রীক শিলচরে আসেন। উল্লাসকর যেদিন জাহাজে এসে শিলচর সদরঘাটে নামেন, সেদিন সেসময়কার পুরপতি সহ অনেকে তাঁকে স্বাগত জানান। জীবনের শেষ বেশ কিছু বছর শিলচরে থেকে তিনি এই শহরটাকে ধন্য করে গেছেন। ১৯৬৫ সালের ১৭ মে তাঁর মৃত্যুর পর পুরসভা শ্মশানে এই স্মারক তৈরি করার উদ্যোগ নেয়।

গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী সভাপতি তথা আইনজীবী শেখর পালচৌধুরী উপস্থিত তরুণদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এই মহান বিপ্লবীদের জন্মদিবস ও মৃত্যুদিবসে অংশগ্রহণ করে নবপ্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা সঞ্চারিত করতে সকলে যেন যত্নবান হয়। গান্ধী শান্তি প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক অশোক কুমার দেব তরুণদের দেশপ্রেম ও মূল্যবোধের আদর্শে উদবুদ্ধ হয়ে জীবনকে গড়ে তুলতে আহ্বান জানান। মূর্তি সংরক্ষণ কমিটির প্রবীণ সদস্য পীযূষ চক্রবর্তী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবীদের স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন বিভিন্ন স্কুল-কলেজেও অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে মত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজু আছামী, আয়ুষ ধর, অভিষেক ধর, সৌভিক দাস, লক্ষীন্ধর দাস সহ অনেকেই।