বঞ্চিত ST প্রার্থীদের নিয়োগের দাবিতে স্পিকারকে চিঠি রঞ্জিতের

যশপাল সিং, আগরতলা।
বরাক তরঙ্গ, ২৮ আগস্ট : শাসক জোটের শরিক দল হয়েও প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবারও সরব হলেন তিপ্রা মথার বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। এবার তাঁর নিশানায় ত্রিপুরা বিধানসভার ২০১৭ সালের জুনিয়র রিপোর্টার নিয়োগ প্রক্রিয়া, যেখানে দুজন তপশিলি উপজাতি (ST) প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় ‘শূন্য’ (00) দিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে তিনি গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। এই ‘গভীর ষড়যন্ত্র’-এর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে তিনি বিধানসভার অধ্যক্ষ এবং রাজ্য তথ্য কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন, যা নিয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা অধ্যক্ষকে লেখা তাঁর চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, ২০১৭ সালে বিধানসভায় ৬টি জুনিয়র রিপোর্টার পদের জন্য নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয় (৩টি অসংরক্ষিত, ৩টি ST)। সেই পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ST প্রার্থী শ্রী নিশি কান্ত দেববর্মা এবং শ্রীমতি তানিকা দেববর্মা—দুজনকেই ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় ‘শূন্য’ দেওয়া হয়েছে, যা বিধায়কের মতে “অকল্পনীয় এবং অস্বাভাবিক”।

কিন্তু তথ্যের গভীরে যেতেই উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর অসঙ্গতি। বিধায়কের পেশ করা নথি এবং আরটিআই (RTI) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রার্থীদের চূড়ান্ত মেধা তালিকা তৈরি হয়েছিল টাইপ ও শর্টহ্যান্ড টেস্ট (১০০), লিখিত পরীক্ষা (৫০) এবং মৌখিক পরীক্ষা (২০)—এই তিনটি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে। সেই হিসেবে, নিশি কান্ত দেববর্মা পেয়েছিলেন, টাইপিং-এ ৫১ + লিখিত-তে ০০ + মৌখিক-এ ১৫ = মোট ৬৬।অপরদিকে তানিকা দেববর্মা পেয়েছিলেন, টাইপিং-এ ৪৩ + লিখিত-তে ০০ + মৌখিক-এ ১৩ = মোট ৫৬।

প্রশ্ন উঠছে, যে প্রার্থীরা টাইপিং এবং মৌখিক পরীক্ষায় এত নম্বর পেতে পারেন, তাঁরা কীভাবে ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় শূন্য পান? এই অসঙ্গতিই এক পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন বিধায়ক।

বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা তাঁর চিঠিতে আরও উল্লেখ করেছেন, এই প্রার্থীরা আরটিআই করে তাঁদের উত্তরপত্র দেখতে চাইলেও, তা তাঁদের দেখানো হয়নি। দীর্ঘ সাত বছর ধরে বঞ্চনার শিকার হয়ে তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটে বিধায়ক অধ্যক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন। একটি বিশেষজ্ঞ পরীক্ষকদের দল গঠন করে সমস্ত উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়ন করা। এই “গভীর ষড়যন্ত্র”-এর তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করা এবং বঞ্চিত এই দুজন ST প্রার্থীকে অবিলম্বে জুনিয়র রিপোর্টার পদে নিয়োগ করা।

শাসক জোটের একজন বিধায়কের এই ধরনের বিস্ফোরক অভিযোগ এবং নথি সহকারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হওয়া, রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়েই এক বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল। এখন দেখার, অধ্যক্ষ এবং তথ্য কমিশন এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

Spread the News
error: Content is protected !!