মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ২৭ ডিসেম্বর : বাজারিছড়া রাধারমণ সেবক সংঘের উদ্যোগে ধুমধাম ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে ১০৮ প্রভুপাদ শ্রীশ্রী রাধারমণ গোস্বামী জিউর পুণ্য স্মরণ উৎসব। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দু’দিনব্যাপী নানা মাঙ্গলিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে একাদশতম এই মহতী উৎসব পালন করছেন আয়োজকরা।উৎসবের প্রথম দিন শনিবার দুপুর প্রায় দু’টা নাগাদ বাজারিছড়া রাধারমণ সেবক সংঘের ব্যবস্থাপনায় এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় স্থানীয় বিভিন্ন আশ্রমের কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট মৃদঙ্গবাদকদের যথাযথ সম্মাননা প্রদান করা হয়। এই সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাজারিছড়া রাধারমণ সেবক সংঘের সভাপতি সূচরিত পাল।এদিন যাঁদের সংবর্ধিত করা হয়, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বাজারিছড়া অখণ্ড মণ্ডলীর সভাপতি দিলীপ পোদ্দার, বাজারিছড়া সৎসঙ্গ উপাসনা কেন্দ্রের সভাপতি ও সম্পাদক বিশ্বজিৎ সিংহ ও বিশু দেব, শ্রীনগর রাধারমণ উপাসনা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক হিমাংশু পাল ও নিকুঞ্জ পাল, বাজারিছড়া রাধারমণ সেবক সংঘের প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ নাগ, রাঙ্গামাটি রাধারমণ উপাসনা কমিটির সভাপতি গোকুল মালাকার, বাজারিছড়া ভারত সেবাশ্রমের সভাপতি উত্তম পাল, সম্পাদক সুভাষ দে, বাপ্পা চক্রবর্তী প্রমুখ।
পাশাপাশি এলাকার সুপরিচিত মৃদঙ্গবাদকদের মধ্যে ছিলেন নরোতম চন্দ, অমরেন্দ্র শুক্লবৈদ্য, গৈরিক দাস বাবাজি, শম্ভু দাস, সুদীপ পাল, রাহুল চক্রবর্তী, স্বরূপ দাস ও নিখিলেশ নাথ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংবাদকর্মীদেরও সংবর্ধিত করা হয়। সকলকে উত্তরীয় ও গামছা পরিয়ে সম্মান জানানোর পাশাপাশি ধর্মীয় গ্রন্থ শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা উপহার হিসেবে প্রদান করা হয়।

সংবর্ধনা পর্ব শেষে মহিলাদের উলুধ্বনি ও মৃদঙ্গ পূজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরপর শঙ্খধ্বনির মধ্য দিয়ে আশ্রম প্রাঙ্গণ থেকে শুভাযাত্রার সূচনা হয়। প্রভুপাদ শ্রীশ্রী রাধারমণ গোস্বামী জিউরের শ্রীবিগ্রহ সুসজ্জিত রথে স্থাপন করে কালাছড়া ও বাজারিছড়া পরিক্রমা করা হয়। এই শোভাযাত্রায় গুরুভ্রাতা ও ভগিনীরা ধুতি-পাঞ্জাবি ও হলুদ শাড়ি পরিধান করে কীর্তনের মাধ্যমে সমগ্র রাজপথ পরিক্রমা করেন।

পরিশেষে শোভাযাত্রা বাজারিছড়া বিসর্জন ঘাটে পৌঁছে গঙ্গা আবাহন করে পবিত্র গঙ্গাজল উত্তোলন করা হয়। পরে নির্ধারিত কার্যসূচি অনুযায়ী সমবেত ধামাইল নৃত্য অনুষ্ঠিত হয় এবং বিকাল সাড়ে পাঁচটায় প্রভুর শতনাম সংগীত পরিবেশিত হয়। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত উপাসনার মাধ্যমে উৎসবের শুভ অধিবাস সম্পন্ন হয়। পরদিন রবিবার ভোরে মঙ্গল আরতির মাধ্যমে স্মরণ উৎসবের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে আট ঘটিকায় বাল্যভোগ, গীতা পাঠ, সকাল নয়টায় গুরুপূজা, দশটা থেকে সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত দীক্ষাদান পর্ব, দুপুর বারোটায় মধ্যাহ্নভোগ ও আরতি অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। রবিবার দুপুর একটা থেকে এক বিশাল ধর্ম সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। পরে ভক্তদের মধ্যে মহাপ্রসাদ বিতরণ চলবে। বিকাল তিনটায় প্রভুর জন্মলীলা কীর্তন, পাঁচটায় শতনাম সংগীত এবং সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত উপাসনার মাধ্যমে দুই দিনের উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সকল সনাতনী ধর্মপ্রাণ ভক্তদের উপস্থিতি কামনা করে দু’দিনের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানসূচি সম্পর্কে অবগত করেন বাজারিছড়া রাধারমণ সেবক সংঘের সভাপতি সূচরিত পাল ও সম্পাদক দেবজ্যোতি নাগ।
উল্লেখ্য, এই পুণ্য স্মরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে সমগ্র বাজারিছড়া এলাকায় এক উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আশ্রম প্রাঙ্গণকে রঙিন আলো, ফুল ও ধর্মীয় আলোকসজ্জায় মনোরম করে সাজিয়ে তুলেছেন আয়োজকরা।


