জাতি ও ধর্ম কেন্দ্রিক বিদ্বেষ অসমকে জটিলতার পথে নিয়ে যাবে : বরাকবঙ্গ
আইন নিজের হাতে তুলে নেবার প্রবণতা বিপদজ্জনক
বরাক তরঙ্গ, ২৮ আগস্ট : নারী নিগ্রহ এবং যৌন নির্যাতনের একাধিক ঘটনাকে সামনে রেখে জাতি ও সম্প্রদায় কেন্দ্রিক বিদ্বেষ বহ্নি ছড়িয়ে, প্রতিহিংসাপরায়ণ তৎপরতায় রাজ্যে গত কয়েকদিনে যে আতঙ্কের আবহ গড়ে তোলা হয়েছে তা অসমকে বহুমাত্রিক জটিলতার পথে নিয়ে যাবে বলে সতর্ক করলো বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন। রাজ্যে বসবাসকারী সব শ্রেণীর মানুষের সার্বিক সুরক্ষা এবং যৌন নির্যাতনের ক্রমবর্ধমান ঘটনা যাতে প্রতিরোধ সম্ভব হয় সে মর্মে প্রশাসনের তরফে কার্যকর কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও সুস্পষ্ট দাবি জানালো বরাকবঙ্গ।
বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই দাবি উত্থাপন করে নিজের হাতে আইন তুলে নেবার চেষ্টাকে প্রশ্রয়দান এবং জাতি এবং ধর্ম পরিচয়ের জন্য ভূমি থেকে উৎখাত ও রুটি রুজির পথকে বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি প্রদানের ঘটনা প্রবাহকে অনাকাঙ্ক্ষিত, অগনতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী এবং রাজ্যের জন্য আত্মঘাতী পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। বিভিন্ন জাতি ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অংশীদারিত্বে অসমের বিকাশ প্রক্রিয়া চলছে একথা স্মরণ করে দিয়ে বরাকবঙ্গের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতমপ্রসাদ দত্ত বিবৃতিতে বলেছেন, কোনও অভিপ্রায় নিয়ে এই ধারায় বিঘ্ন ঘটানোর উদ্যম রাজ্যে বসবাসকারী কারও জন্যই কল্যাণকর হবে না। ভারতীয় সংবিধান জাতি -ধর্ম নির্বিশেষে তার নাগরিকদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস, শিক্ষা গ্রহণ এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার যে অধিকার দিয়েছে তাকে অস্বীকার করার প্রবণতা মৌলিক অধিকার হরণেরই নামান্তর। তাই প্রভুত্ব কায়েমের স্বপ্ন দেখিয়ে বিভাজন তৈরীর চেষ্টা থেকে সব পক্ষকে বিরত থাকা উচিত।
সাধারণ সম্পাদক দত্ত আরও বলেছেন, নারী-নিগ্রহ এবং যৌন নির্যাতন সহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক ঘটনায় যারা যুক্ত তাদের জাতি কিংবা ধর্মপরিচয়ের সূত্রে দেখা উচিত নয়। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা অপরাধী এবং সে অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। গত দু মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব নারী নিগ্রহ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনার খবর সংবাদ মাধ্যমে এসেছে তাতে দেখা গেছে, নির্যাতনকারীরা বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের লোক। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয় সেজন্যে সাধারণ মানুষ রাজপথে নেমে এসে দাবি জানাচ্ছেন। রাজ্যে এ ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি সামাজিক উত্তেজনা তৈরি করছে। তাই সর্বস্তরের মানুষের ঘটনার নিন্দায় এবং দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তি চেয়ে দাবি উত্থাপন করা উচিত। অভিযুক্তের জাতি কিংবা ধর্মপরিচয়ের জন্য গোটা জাতি বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীকে যেমন টার্গেট করা কাম্য নয়, তেমনি অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টাও নিন্দনীয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিবসাগরে সংঘটিত একটি নারী নিগ্রহের ঘটনার জেরে রাজ্যের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি বিশেষ জাতি গোষ্টির বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ ও মহিলাদের হাটু গেড়ে উগ্র জাতীয়তাবাদীদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা ঘটনায় যে নজির সৃষ্টি হয়েছে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক এবং এ ধরনের ঘটনার যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সহ ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অস্থিরতা তৈরির জন্য যেসব শক্তি তৎপর তারা অসম সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে তারা বিভিন্ন মুখোশে কাজ করতে পারে এমন একটা আশঙ্কা বিরাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে এ রাজ্যে সব পক্ষের সংযত থাকা উচিত। রাজ্যে যাতে শান্তির আবহ বিরাজ করে বিবৃতিতে সেজন্য সব জাতি ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বানও রেখেছেন সাধারণ সম্পাদক দত্ত।