ভারত সফরে পুতিনের ‘ফ্লাইং ক্রেমলিন’, সামরিক শক্তি ও বিলাসের প্রতীক!

৫ ডিসেম্বর : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারতগামী বিমানটি গতকাল বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশিবার ট্র্যাক হওয়া ফ্লাইট হিসেবে কার্যত নতুন রেকর্ড গড়েছে! ফ্লাইট ট্র্যাকিং সংস্থা ‘ফ্লাইট র‍্যাডার ২৪’ (Flight Radar 24)-এর তথ্য অনুযায়ী, রুশ সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানটির গতিবিধি ট্র্যাক করার জন্য এদিন বিশ্বজুড়ে আগ্রহ ছিল তুঙ্গে।

সংস্থাটি এক্স (পূর্বের টুইটার) এবং তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, “আমাদের সবচেয়ে বেশি ট্র্যাক হওয়া ফ্লাইট: ভারতগামী রুশ সরকারি বিমানগুলির মধ্যে অন্যতম।”এদিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট পুতিন নয়াদিল্লিতে অবতরণ করেন। প্রোটোকল ভেঙে তাঁকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানা গিয়েছে, এই দু’দিনে দুই দেশের শীর্ষ নেতা প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে বাণিজ্য— বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।

বিশ্বের অন্যতম কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অধিকারী পুতিন সাধারণত রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দুই প্রতীক ছাড়া সফর করেন না: তাঁর অরাস সেনেট (Aurus Senat) সাঁজোয়া লিমুজিন এবং তাঁর হাই কাস্টমাইজড প্রেসিডেন্ট বিমান, ইলিউশিন আইএল-৯৬-৩০০পিইউ (Ilyushin IL-96-300PU), যা “ফ্লাইং ক্রেমলিন” (Flying Kremlin) নামে পরিচিত।

এই বিমানটি হল আইএল-৯৬-৩০০-এর একটি পরিবর্তিত সংস্করণ। এটি ১৯৮০-এর দশকে ইলিউশিন ডিজাইন ব্যুরো কর্তৃক তৈরি একটি দীর্ঘ পাল্লার, চার-ইঞ্জিনবিশিষ্ট রাশিয়ান এয়ারলাইনার। বিমানটি প্রথম উড়েছিল ১৯৮৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এবং ১৯৯০-এর দশকের প্রথম দিকে এটি পরিষেবা দিতে শুরু করে।

রাষ্ট্রপতি পুতিনের এই বিমানটি (আইএল-৯৬-৩০০পিইউ),জরুরি পরিস্থিতিতে একটি সম্পূর্ণ মোবাইল কমান্ড সেন্টার হিসাবে কাজ করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এতে রয়েছে এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট লিঙ্ক এবং সুরক্ষিত রেডিও চ্যানেল যা বিশ্বজুড়ে সামরিক ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করে। বিমানটি ইলেকট্রনিক কাউন্টারমেজার্স, রাডার-জ্যামিং প্রযুক্তি এবং অ্যান্টি-মিসাইল ব্যবস্থা দ্বারা সুরক্ষিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, বিমানটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস (EMP) আক্রমণ প্রতিরোধী। এতে একটি নিউক্লিয়ার কমান্ড ইন্টারফেসও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার ফলে চরম পরিস্থিতিতে বিমান থেকে সামরিক নির্দেশ জারি করা সম্ভব।

বিমানের ভেতরের কাঠামোটি একটি রাজকীয় বাসভবনের মতো। এতে রয়েছে রাষ্ট্রপতির একটি ব্যক্তিগত রাজকীয় বেডরুম, একটি বড় কনফারেন্স রুম, ব্যক্তিগত অফিস, অতিথিদের জন্য লাউঞ্জ, বিলাসবহুল বাথরুম, রান্নাঘর এবং এমনকি ব্যায়ামের জন্য ফিটনেস স্পেসও। বিমানটির অভ্যন্তরীন সজ্জায় সোনার প্রলেপ, মূল্যবান কাঠ (কারেলিয়ান বার্চ), নিওক্লাসিক্যাল আসবাবপত্র এবং প্রিমিয়াম চামড়ার ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এদিন আকাশে দুটি রুশ বিমান দেখা গিয়েছিল। দেখা যায়, বিমান দুটি পালা করে তাদের ট্রান্সপন্ডার বন্ধ ও চালু করছিল। ট্রান্সপন্ডার হল সেই ডিভাইস, যা বিমান ট্র্যাফিক কন্ট্রোলারদের কাছে বিমানের স্থানাঙ্ক এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইটের তথ্য প্রেরণ করে। সম্ভবত, এই কৌশলের উদ্দেশ্য ছিল, ঠিক কোনটিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন আছেন, সেই তথ্য গোপন রাখা।
খবর : উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *