পুরকর ও বিভিন্ন সমস্যার প্রতিবাদে বিশাল মিছিল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চের
বরাক তরঙ্গ, ৯ সেপ্টেম্বর : প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ, শিলচর এর আহ্বানে একটি প্রতিবাদী মিছিল বেলা সাড়ে এগারোটায় নরসিংটোলা ময়দান থেকে শুরু হয়ে ভাওয়াল পয়েন্ট, সেন্ট্রাল রোড, প্রেমতলা, হাসপাতাল রোড হয়ে রাঙ্গিরখাড়ির নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মুর্তির পাদদেশে গিয়ে সমাপ্ত হয়। মিছিলে সক্রিয়পন্থী প্রবীণ নাগরিক মঞ্চের সভাপতি অধ্যাপক দীলিপ কুমার দে এবং নীহারেন্দু পুরকায়স্থ, নাগরিক স্বার্থ রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হরিদাস দত্ত, বনানী রায় চৌধুরী, সত্যজিৎ গুপ্ত, প্রাক্তন পুরপতি যথাক্রমে তমালকান্তি বনিক ও মনোজ পাল, প্রাক্তন পৌরকমিশনার তরুণ দেব ও অতনু ভট্টাচার্য, জেলা বার সংস্থার সভাপতি আইনজীবী দুলাল মিত্র, বিশিষ্ট সমাজ কর্মী স্বর্ণালী চৌধুরী, এআইডিএসও’র রাজ্য কমিটির অন্যতম সদস্য পল্লব ভট্টাচার্য, এআইডিওয়াইও’র জেলা সম্পাদক পরিতোষ ভট্টাচার্য, কোরাস সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিশ্বজিৎ দাস, নারী মুক্তি সংস্থার স্নীন্ধা নাথ, ফোরাম ফর স্যোশাল হারমনি এর অরূপ বৈশ্য, অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের মৃনাল কান্তি সোম, ‘সিটু’ -এর রঞ্জন দাস, উত্তরণ ক্লাবের রামেন্দ্র ভট্টাচার্য, রূপম সাংস্কৃতিক সংস্থার সুভাষ বনিক সহ বিভিন্ন ক্লাব সংগঠনের সদস্যরা অংশ নেন। সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি ধ্রুব কুমার সাহা, সহ সভাপতি সাধন পুরকায়স্থ, শিহাব উদ্দিন আহমেদ, আসু পাল, প্রদীপ নাথ, অধ্যাপক অজয় রায়, ডা এম শান্তি কুমার সিং, সীমান্ত ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব শর্মা, সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার ভট্টাচার্য, কোষাধ্যক্ষ মলয় দত্ত, সম্পাদক অরিন্দম দেব, হিল্লোল ভট্টাচার্য, ইলোরা চক্রবর্তী, রঞ্জিত চৌধুরী, নিরুপম ব্যানর্জী, মধুসূদন কর, কমল চক্রবর্তী, পার্থ সুদীপ রায়, জয় বরদিয়া, দীপঙ্কর চন্দ, আইনজীবী অজয় রায়, মানস দাস, ভবতোষ চক্রবর্তী, গৌরাঙ্গ নাথ, কৃশানু ভট্টাচার্য, হানিফ আহমেদ বড়ভূইয়া, সুজন দত্ত, ফারুক লস্কর, খাদেজা বেগম লস্কর, আইনজীবী ভাস্কর ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা।
প্রগতিশীল নাগরিক সমন্বয় মঞ্চ, শিলচরের সভাপতি ধ্রুব কুমার সাহা মিছিলে অংশগ্রহণ করে বলেন শহরের রাস্তাঘাটের চরম দুরবস্থার বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার হওয়ার পর কাজ শুরু হলেও তা অতি নিম্ন মানের হচ্ছে। এ নিয়ে মঞ্চের পক্ষ থেকে সোচ্চার হলেও বিভাগীয় প্রধানরা নিরব। তিনি বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই শহরে নোংরা জল জমে নাগরিকদের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তোলে। এসবের প্রতিবাদে আজ নাগরিকেরা প্রতিবাদী গণমিছিলে যোগ দিয়েছেন।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য বলেন, পুরসভা থেকে কালো দুর্গন্ধযুক্ত পানীয় জল অনিয়মিত ভাবে সরবরাহ করা হয়। জল সরবরাহের কোনও সময় নেই। সব রকমের পরিষেবা দিতে সরকার পরিচালিত পুরসভা চরম ব্যর্থ। অথচ এরই মধ্যে বেআইনিভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যথেচ্ছ পুরকর, জলকর, জমি কেনার কর ইত্যাদি। আসু পাল বলেন বন্যা আমাদের নিত্য সঙ্গী। পলিমাটিতে ভরে গেছে নদীর বুক। সুগভীর ভাবে নদী খনন ছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণের আর কোনও উপায় নেই। বরাক উপত্যকার সাড়ে সাত শ’ স্লুইস গেটই ভাঙা। একটা স্লুইস গেটও কাজ করেনা। রাঙ্গিরখাল সহ সব ক’টি প্রাকৃতিক খাল দখল হয়ে গেছে এবং আবর্জনায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নদী এবং খাল খনন করা না হলে বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবার উপায় নেই।
বাসুদেব শর্মা বলেন, চার বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তিহীন বাহানা দেখিয়ে শিলচরে পুরনির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে। পুর কর্পোরেশনের ভাঁওতা দিয়ে বছরের পর বছর উন্নয়ণ বন্ধ রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী নির্বাচিত পুরসভার ব্যবস্থা না করে পরোক্ষে দিশপুর থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে শিলচর পুরসভাকে। তিনি দ্রুত পুর নির্বাচন করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে পুরসভা সমঝে দেওয়ার দাবি তুলেন। সাধন পুরকায়স্থ বলেন দু’বেলা পরিশ্রুত জল দিতে পারেনা পৌরসভা অথচ জলকর প্রতিমাসে ১২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি এও বলেন যে ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স ফি ৪/৫ গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ৫০ টাকার ফর্মের দাম বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০০ টাকা। শিলচরবাসীদের লুট করে নেবার এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে তিনি আহ্বান জানান। অধ্যাপক অজয় রায় বলেন অন্যায় যখন নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়, প্রতিবাদ প্রতিরোধ তখন আমাদের অবশ্য কর্তব্য। তা করতে না পারলে সেই দিন খুব দূরে নয়, যেদিন আমাদের বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে উঠবে।
তিনি সবাইকে পুরসভার অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার আহ্বান জানান। মিছিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ গ্রহণ করেন। মঞ্চের পক্ষ থেকে মিছিলে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক ব্যাক্তি, সংগঠন ও সংস্থার প্রতিনিধিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয় এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে পুনরায় ঘোষণা করা হয়।