পাথারকান্দিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ৭২ জন শিক্ষককে সংবর্ধনা______
মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি।
বরাক তরঙ্গ, ১৩ ডিসেম্বর : শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পাথারকান্দিতে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ঘটা করে সংবর্ধনা জানানো হলো। মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালের উপস্থিতিতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নবনিযুক্ত শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ, নিষ্ঠা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনে তাঁদের ভূমিকার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।শিক্ষকতা এমন এক মহান পেশা, যা সমাজ ও জাতি গঠনের মূল ভিত রচনা করে। একজন শিক্ষক তাঁর জ্ঞান, আদর্শ ও নিষ্ঠার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তোলেন, শিক্ষার্থীদের জীবনে সাফল্যের বীজ বপন করেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পেশায় নবনিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে অনুপ্রেরণামূলক বার্তা রাখলেন পাথারকান্দি বিধায়ক তথা রাজ্যের মৎস্য, পশুপালন ও পূর্ত দফতরের মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল।শুক্রবার পড়ন্ত বিকেলে পাথারকান্দি রবীন্দ্রভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় বৃহত্তর পাথারকান্দি সমষ্টিতে সদ্য রাজ্য সরকারের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত মোট ৭২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধিত করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল বলেন, “আজকের দিনটি পাথারকান্দির শিক্ষা জগতের ইতিহাসে এক বিরাট প্রাপ্তি। এই নিয়োগ শুধু চাকরি পাওয়া নয়, বরং শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও মেধার জয়ের প্রতীক।তিনি বলেন, চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গুয়াহাটির খানাপাড়াস্থ পশু চিকিৎসা বিজ্ঞান মহাবিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত এক বৃহৎ অনুষ্ঠানে রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের অধীনে মোট ৮,২০৬ জন প্রার্থীর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। এর মধ্যে পাথারকান্দি সমষ্টির বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত ৭২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এই নিয়োগপত্র লাভ করেন। নিয়োগের ঠিক এক মাস পূর্তিতে তাঁদের সম্মান জানাতেই এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।নিজের বক্তব্যে তিনি অতীতের নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “২০১১ সালের আগে শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। নেতা-মন্ত্রীদের পছন্দের লোকেরাই চাকরি পেত। কিন্তু সময় বদলেছে, যুগ বদলেছে। বর্তমান সরকার মেধার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিচ্ছে।”

শিক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে এক সময় টেট পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এ কথাও উল্লেখ করেন তিনি।বিরোধীদের কড়া ভাষায় আক্রমণ করে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল বলেন, ২০১৬ সালে আমি বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সময় এই কেন্দ্রে শূন্য শিক্ষক পদ থাকা ২৯টি স্কুল ছিল। তৎকালীন সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে রেখেছিল।” তিনি আরও বলেন, তরুণ গগৈ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে মণিলাল গোয়ালা তিনবার বিধায়ক ছিলেন এবং পূর্ত বিভাগের সংসদীয় সচিবের দায়িত্বে থাকলেও তাঁর নিজের বাড়ির সামনের রাস্তাটুকুও তৈরি হয়নি। সেই রাস্তাও বিজেপি সরকারের আমলেই নির্মিত হয়েছে। দীর্ঘ বক্তব্যে মন্ত্রী কেন্দ্রের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত খতিয়ান তুলে ধরে বিরোধী দলের মন্ত্রী ও বিধায়কদের তীব্র সমালোচনা করেন। পাশাপাশি নবনিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল নিজ হাতে বিভিন্ন হাইস্কুল ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গলায় গামছা পরিয়ে সংবর্ধনা জানান।
অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দলীয় কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ এবং এলাকার বিশিষ্ট অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদরা।অনুষ্ঠানটি পাথারকান্দির শিক্ষা মহলে নতুন আশার সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন উপস্থিত অতিথি ও অভিভাবকরা।


