জমির পাট্টার ঘোষণায় উৎসবে মাতল পাথারকান্দির বাগানাঞ্চল

মোহাম্মদ জনি, পাথারকান্দি। 
বরাক তরঙ্গ, ২৮ নভেম্বর : আজকের দিনটি রাজ্যের চা শ্রমিক সমাজের ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে। বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনের চতুর্থ দিনে রাজ্যের হাজার হাজার চা শ্রমিক পরিবারের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ‘জমির পাট্টা’ প্রদানের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এই ঘোষণা হতেই পাথারকান্দির বিভিন্ন চা বাগানে যেন আনন্দের ঢেউ ছুটে যায়। শ্রমিক লাইন থেকে অফিস টিলা প্রতিটি কোণে বইতে থাকে উচ্ছ্বাসের জোয়ার।শুক্রবার ইচাবিল চা-বাগানে সকাল থেকেই উৎসবমুখর পরিবেশ। বাগানের শত শত শ্রমিক, নারী-পুরুষ, প্রবীণ, তরুণ সকলেই হাতে গেরুয়া পতাকা, মুখে স্লোগান বিজেপি জিন্দাবাদ! হিমন্ত বিশ্বশর্মা জিন্দাবাদ! “মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল জিন্দাবাদ উচ্চারণ করতে করতে জমায়েত হন নাচঘরের চত্বরে। যেন বহু বছরের স্বপ্নপূরণের আনন্দে উল্লাসে ভরে ওঠে পুরো এলাকা।

ইচাবিল নাচঘরে আয়োজিত বিশেষ সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইচাবিল জিপি সভানেত্রী সবিতা কুর্মি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, স্বাধীনতার এতগুলো বছর পর চা শ্রমিকদের জমির অধিকার নিশ্চিত করতে যে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ আজ নেওয়া হল, তা সত্যিই যুগান্তকারী। বিজেপি সরকারই প্রথম আমাদের মতো চা শ্রমিক পরিবারের কথা ভেবে জমির পাট্টা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিল। আমরা মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পালকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।এরপর বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সমাজসেবী ও সভানেত্রীর প্রতিনিধি রতন কুর্মি। তিনি বলেন, চা শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেও যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত ছিলেন জমির অধিকারের মতো মৌলিক মর্যাদা থেকে। আজকের সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি চা শ্রমিক সমাজের আত্মসম্মান পুনরুদ্ধারের দিন। মুখ্যমন্ত্রী সত্যিই মানুষের মনের কথা বুঝেছেন।বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি রাজু কুর্মি, জেলা টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মধুসূদন লোহার, স্থানীয় বিজেপি কর্মী শেখর ভট্টাচার্য ও দুলন চন্দও তাঁদের বক্তব্যে বলেন আজ প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি লাইন বস্তিতে দাওয়াতের মতো উৎসব চলছে। শিশুরা আতশবাজি জ্বালাচ্ছে, মহিলারা খুশিতে একে অপরকে আলিঙ্গন করছেন। এত আনন্দ আগে কখনও দেখিনি। এই সিদ্ধান্ত চা শ্রমিকদের জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।

বক্তারা আরও জানান, যেন অনেক প্রজন্মের স্বপ্নপূরণ হল আজ। যারা আজীবন চায়ের পাতার সুবাসে দিন কাটালেন, তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম এখন নিজেদের ‘জমি’-র মালিকানা পাবে এ আনন্দ ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়।সভা শেষে উপস্থিত সবাইকে লাড্ডু বিতরণ করেন জিপি সভানেত্রী সবিতা কুর্মি। পুরো বাগান এলাকায় যেন উৎসব, আনন্দ, উল্লাস আর আশা সবকিছুর মিলনমেলা সৃষ্টি হয় আজ।এক কথায় বলা যায় চা শ্রমিকদের জমির পাট্টা প্রদানের এই সিদ্ধান্ত পাথারকান্দির চা বাগানগুলোতে এনে দিয়েছে নতুন ভোরের আলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *