প্রজ্জ্বল দেবের সমর্থনে নির্বচনী সভা হাইলাকান্দিতে
বরাক তরঙ্গ, ২২ এপ্রিল : হাইলাকান্দিতে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের করিমগঞ্জ লোকসভা আসনের প্রার্থী প্রজ্জ্বল সুদীপ দেবের সমর্থনে নির্বচনী সভা করলেন দলের দলের রাজ্য সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জননেত্রী চন্দ্রলেখা দাস।রবিবার বিকেল চারটায় হাইলাকান্দি শহরের মটর বাস স্ট্যান্ড প্রাঙ্গণে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের হাইলাকান্দি জেলা কমিটির সদস্য কমরেড সুশীল পালের সভাপতিত্বে নির্বাচনী সভায় মুখ্য বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন তিনি। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের রাজ্য কমিটির সদস্য ময়ূখ ভট্টাচার্য ও দলের প্রার্থী প্রজ্জ্বল সুদীপ দেব।
সভায় বক্তা চন্দ্রলেখা দাস বলেন, সুশাসনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় আসা বিজেপি সরকার রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কাছাড় কাগজ কল, নগাঁও কাগজ কল ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া, রাজ্যের ২৭ লক্ষ নাগরিকদের আধার কার্ড আটকে রাখা, দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী মানুষের ঘর বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া, এনকাউন্টারের নামে বিনা বিচারে মানুষকে হত্যা করা, গণআন্দোলনের উপর দমন পীড়ন নামিয়ে রাজ্যে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, কংগ্রেস যে বিশ্বায়ন নীতি, গ্যাট চুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা,স্বাস্থ্য, রেল, বিদ্যৎ, বিমা, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তা দ্রুত গতিতে বিজেপি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের সমস্যার সুরাহা হয় না বরং দিনের পর দিন তীব্র আকার ধারণ করে। আদানি, আম্বানি, টাটা, বিড়লারা পাহাড় প্রমাণ সম্পত্তির মালিক হচ্ছেন, সমাজ সভ্যতার স্রষ্টা শ্রমিক কৃষকরা নিঃস্ব রিক্ত হচ্ছেন।তিনি বলেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় একমাত্র গণআন্দলন করে জনগণের বাঁচার অধিকার অর্জন করতে হবে।
চার দশক ধরে কংগ্রেস, এজিপি ও বিজেপি অসমের অর্থনৈতিক সহ জ্বলন্ত সমস্যাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে : চন্দ্রলেখা
তিনি বলেন, পুঁজিপতি শ্রেণীর শাসন শোষণকে পাকাপোক্ত করার স্বার্থে জনগণকে পরস্পর বিরোধী যুদ্ধংদেহী শিবিরে পরিণত করা হচ্ছে। বাংলাদেশি সমস্যার কথা বলে গত চার দশক ধরে কংগ্রেস, এজিপি ও বিজেপি অসমের অর্থনৈতিক সহ সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে ও সংখ্যালঘু হিন্দু ও মুসলমান মানুষের উপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও নিপীড়ন নামিয়ে এনেছে। তাছাড়া হিন্দু ও মুসলমানের নামে, ট্রাইবেল – ননট্রাইবেলের নামে জনগণকে বিভক্ত করা হচ্ছে। সমস্ত অংশের জনগণের মূল সমস্যার কারণ যে পুঁজিবাদ তা সম্পর্কে জনগণকে অজ্ঞ রেখে সাধারণ মানুষকে জাত পাত ধর্মের নামে অজ্ঞ করা হচ্ছে। তাই দেশের অন্যান্য রাজ্যে যতটুকু উন্নয়নের কাজ করতে বাধ্য হয়, এখানে রাজ্য সরকারের সেটা করতে বাধ্য হয় না।
তিনি বলেন, বিজেপি রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের “যত মত তত পথ” এই ধারণার পরিবর্তে মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব সৃষ্টি করে ভোটের বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে। তার বিকল্প হিসাবে সিপিআইএম ইত্যাদি বামপন্থী দলগুলো ধর্মনিরপেক্ষ বলে পুঁজিপতি শ্রেণীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত দল কংগ্রেসকে উর্দ্ধে তুলে ধরছে যারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নেলী, মোকালমোয়ায় হাজার হাজার সংখ্যালঘু মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, শিখ নিধনযজ্ঞ হয়েছিল, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার রামমন্দিরের তালা খুলে দিয়েছিল, কংগ্রেসের নরসিমা রাও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে এনআরসির কাজ শুরু হয়েছিল। এই কংগ্রেস দল কোনোভাবেই সংখ্যালঘুর মিত্র হতে পারে না। ইউডিএফ দলও জনগণের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে কখনও লড়াই করেনি। সংখ্যালঘু রক্ষার স্বার্থে কোনো লড়াই আন্দোলন করছে না। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি বামপন্থী ভাবধারার ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্ধে উঠে ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অনেক নেমে আসা আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করাটাই একমাত্র পথ। তিনি গণআন্দোলনের আপোষহীন শক্তি এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের মনোনীত প্রার্থী ও গণআন্দোলনের পরীক্ষিত সৈনিক প্রজ্জ্বল সুদীপ দেবকে বেটারি টর্চ চিহ্নে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। বক্তব্য রাখেন প্রার্থী প্রজ্জ্বল সুদীপ দেব।
এ দিন সিরাজপট্টি পয়েন্ট, এনএস রোড, বাটা পয়েন্ট, শিববাড়ি রোড, রবীন্দ্র সরণি, কাটলিছড়া বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত একটি স্লোগান মুখরিত মিছিল পরিক্রমা করে। জনগণের দাবি ও লড়াইয়ের শ্লোগানে মুখরিত এই মিছিলের প্রতি হাইলাকান্দিবাসীর গভীর সমর্থন প্রতিফলিত হয়।