বরাক উপত্যকার নাগি হাঁস দেশীয় জাত হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২২ ডিসেম্বর : অসমের পোলট্রি ঐতিহ্যের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে, বরাক উপত্যকার স্থানীয় নাগি হাঁস (অধিগ্রহণ নম্বর: INDIA_DUCK_0200_NAGI_11009)কে ভারতীয় কৃষি গবেষণা পরিষদ (ICAR)–এর ন্যাশনাল ব্যুরো অব অ্যানিম্যাল জেনেটিক রিসোর্সেস (NBAGR) কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় জাত হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে। সদ্য অনুষ্ঠিত একটি ICAR বৈঠকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, যা খানাপারাস্থিত ভেটেরিনারি সায়েন্স কলেজ (CVSc)-এর নেতৃত্বে প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিচালিত পদ্ধতিগত গবেষণার সফল পরিণতি নির্দেশ করে।

প্রধানত শ্রীভূমি ও কাছাড় জেলায় পাওয়া নাগি হাঁস তার সাপ-সদৃশ ভঙ্গি, গলায় সাদা দাগসহ সম্পূর্ণ কালো পালক এবং জলাভূমি পরিবেশে অসাধারণ অভিযোজন ক্ষমতার জন্য পরিচিত। উৎপাদনক্ষমতার দিক থেকেও এই জাত গুরুত্বপূর্ণ; বছরে গড়ে প্রায় ১৫০টি ডিম পাড়তে সক্ষম। এই জাতীয় স্বীকৃতির ফলে নাগি হাঁস একটি স্বতন্ত্র জিনগত পরিচয় লাভ করেছে, যার মাধ্যমে দক্ষিণ আসামের গ্রামীণ হাঁস-চাষি সম্প্রদায়গুলোর সামাজিক-অর্থনৈতিক সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

এই সফল নিবন্ধন খানাপারাস্থিত ভেটেরিনারি সায়েন্স কলেজের পাশাপাশি একটি বহু-সংস্থাগত সহযোগিতার ফল। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার নেতৃত্ব দেয় CVSc, খানাপারা; অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে নথিভুক্তকরণ ও জার্মপ্লাজম সনাক্তকরণের দায়িত্ব পালন করে শ্রীভূমি কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র (KVK), শ্রীভূমি জেলা পশুচিকিৎসা বিভাগের সক্রিয় সহযোগিতায়। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাভূমি সোনবিলের আশপাশে বসবাসকারী স্থানীয় হাঁস-পালক দের নিয়ে গঠিত সোনবিল নাগি হাঁস উৎপাদক সমবায় সমিতিও এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

জাতীয় নিবন্ধনের পর এখন এই মূল্যবান জার্মপ্লাজমের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ, জিনগত বিশুদ্ধতা ও টেকসই ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হবে। বরাক উপত্যকার জেলা পশুচিকিৎসা দপ্তরসমূহ এবং শ্রীভূমি, কাছার ও হাইলাকান্দির KVK-গুলো জিনগত মিশ্রণ রোধে উপ-হ্যাচারি ও বৈজ্ঞানিক প্রজনন ইউনিট স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সোনবিল সমবায় সমিতি ও স্থানীয় কৃষকদের নিয়মিত কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে, যাতে সুশৃঙ্খল প্রজনন ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জাতীয় স্বীকৃতি নাগি হাঁসকে জিনগত ক্ষয় ও বিলুপ্তির ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত করার পাশাপাশি বিশেষ অনুদান, সংরক্ষণ কর্মসূচি এবং কৃষক-কেন্দ্রিক উন্নয়ন উদ্যোগের নতুন পথ খুলে দেয়। এর মাধ্যমে জীবিকা শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি বরাক উপত্যকার অনন্য কৃষি-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *