মণিপুরের হিংসা কঠোর পদক্ষেপ না করলে দেশেরও বিপদ
বরাক তরঙ্গ, ২৪ জুলাই, সোমবার,
গত ৩ মে থেকে জ্বলছে প্রতিবেশী রাজ্য মণিপুর। রাজ্যের প্রতিটি কোণায় হিংসার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় দু’মাস ধরে চলা এই দাঙ্গা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলেছে। আমেরিকা ও ইউরোপ থেকেও প্রতিবাদের আওয়াজ শোনা গিয়েছে। সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর গোটা দেশ সহ বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে। আর এই ভিডিও ভাইরাল হলে মৌনতা ভাঙলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
এই দাঙ্গা রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। হিংসার আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যে। আর সবচেয়ে আক্রান্ত হয়েছেন উভয় সম্প্রদায়ের নারীরা। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীরা ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়েছেন। আর এমন নৃশংস কর্মকাণ্ডের দৃশ্য জনসম্মুখে বেরিয়ে আসছে।
যদিও মিথৈদের সরকারি উপজাতি মর্যাদা দেওয়ার দাবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করে তখন উত্তেজনা বেড়ে যায়, যা কুকিরা যুক্তি দিয়েছিল যে সরকার ও সমাজের উপর তাদের ইতিমধ্যেই শক্তিশালী প্রভাব জোরদার করবে, তাদের জমি কিনতে বা প্রধানত কুকি অঞ্চলে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেবে। কিন্তু এই দাঙ্গার পেছনে মূলত কী রহস্য এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভিন্নজনের মত প্রকাশ হয়েছে। দ্য ফ্রন্টিয়ার মণিপুর পত্রিকার সম্পাদক ধীরেন এ সাদোকপাম বলেছেন, “এবার, সংঘাতের মূলে রয়েছে ধর্ম নয়, জাতিগততা।”
মালেম নিঙথৌজা নামে এক বিশিষ্ট নাগরিক বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে কুকিদের জমি বেশি থাকলেও, জনসংখ্যা কম। সেখানে ক্ষমতাশালী কুকিরা বরাবরই রাষ্ট্রের মদদ পেয়ে এসেছে। তাদের সাহায্যে সেনাবাহিনী বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।’
এ ছাড়া সম্প্রতি মাদক পাচারের অভিযোগে পার্বত্য জনগোষ্ঠী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আফিম চাষ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে মণিপুর সরকার। বনাঞ্চল থেকে পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উচ্ছেদ করার চেষ্টাও চালানো হয়েছে। ‘এই সবকিছু শেষ পর্যন্ত কুকি জনগোষ্ঠীকে উদ্বিগ্ন এবং উত্তেজিত করেছে। তারই ফল এ জাতি দাঙ্গা। এর জন্য অনেকটাই সরকার দায়ী।’ বলেন নিঙথৌজা।
কুকি, নাগাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পড়াশোনা, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে মিথৈ সম্প্রদায়। এ অবস্থায় যদি তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে তাদের আরও সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হয়, তবে তারা আরও এগিয়ে যাবে। এতে পিছিয়ে পড়বে অন্যান্য জনজাতি।
কিন্তু কুকিরা বলছে মিথৈ-নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বারা পরিচালিত মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তাদের সম্প্রদায়কে উপড়ে ফেলার একটি পর্দা।
কিন্তু সরকার বা প্রশাসন সেই রাজ্যের নিরীহ মানুষের ইজ্জত, সম্পত্তি, অধিকার যেন অক্ষুণ্ণ থাকে তাই হিংসার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। অন্যথায় দেশেরও বিপদ।