বাড়িতে সশরীরে উপস্থিত না থাকলে নাম কর্তন! এমন ফরমানে ক্ষোভ করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের

আইনি পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি জেলা সভাপতি তাপস পুরকায়স্থের_____

মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ৮ ডিসেম্বর : শ্রীভূমি জেলার রাজনৈতিক আবহে নেমেছে নতুন উত্তাপ। জেলা নির্বাচন কমিশনারের সাম্প্রতিক নির্দেশকে কেন্দ্র করে সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল সবার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে বিস্ময়, ক্ষোভ ও আশঙ্কার সুর। এই বিতর্কের মাঝেই আজ ইন্দিরা ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাপস পুরকায়স্থ প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি অভিযোগ করেন একতরফা নির্দেশের মাধ্যমে জেলার লাখো মানুষের উপর এমন এক বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা শুধু অমানবিকই নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাচ্ছে। সোমবার করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস কার্যালয় ইন্দিরা ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাপস পুরকায়স্থ জেলা নির্বাচন আধিকারিক ও জেলা কমিশনারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশকে অমান্য করে জেলা কমিশনার এমন এক হঠকারী নির্দেশ জারি করেছেন যার ফলে জেলার জনগণের মধ্যে চরম বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।

তাপস পুরকায়স্থ জানান, প্রতি বছর বুথ লেভেল অফিসার নিয়মিত সামারি রিভিশন করে থাকেন। এবার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী স্পেশিয়াল রিভিশন চলছে। এতদিন বিএলও-রা ভোটার তালিকার ভিত্তিতে প্রতিটি পরিবারের সদস্যসংখ্যা যাচাই করতেন। কিন্তু গত ৩–৪ দিন আগে জেলা কমিশনার হঠাৎ নির্দেশ দেন যে ভোটার লিস্টে যাদের নাম আছে, তাদের প্রত্যেককে অবশ্যই নিজ নিজ বাড়িতে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে; না হলে নাম কর্তন করা হবে। এই নির্দেশ জারির সঙ্গে সঙ্গেই জেলার সর্বত্র চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশেষ করে উত্তর করিমগঞ্জ ও পাতারকান্দি নির্বাচন অঞ্চলে পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ ধারণ করেছে।

তাপস পুরকায়স্থ এও বলেন, করিমগঞ্জ জেলার প্রায় চল্লিশ শতাংশ মানুষ জীবিকার সন্ধানে বা চাকরি সূত্রে জেলার বাইরে থাকেন। এখন যদি হঠাৎ করে তাদের বাড়িতে উপস্থিত থাকতে বলা হয়, তাহলে হাজার হাজার মানুষকে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরতে হবে—এতে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, জেলা কমিশনার তা উপলব্ধি করছেন না। তিনি আরও অভিযোগ করেন, নির্বাচন সংক্রান্ত যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইন অনুসারে সকল রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু জেলা কমিশনার সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে স্বেচ্ছাচারীভাবে নির্দেশ জারি করেছেন, যা তিনি “অনৈতিক এবং জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া তুঘলকি সিদ্ধান্ত” বলে মন্তব্য করেন। এছাড়াও কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, এক বিশেষ সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজন BLO–কে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এর সুনির্দিষ্ট কারণ জেলা প্রশাসন জানায়নি। অন্যদিকে, এক নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের বিএলও হিসেবে চিহ্নিত করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এই রহস্যময় আচরণের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তাপস পুরকায়স্থ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, জেলা কমিশনার যদি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন, তবে আমরা সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো এবং আইনের দ্বারস্থ হবেন। জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই অন্যায় সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেবো না।

সাংবাদিক সম্মেলনে আইনজীবী জ্যোতিষ পুরকায়স্থ নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন টেকনিক্যাল দিক তুলে ধরেন এবং জানান যে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস লিগ্যাল সেল ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। খুব শিগগিরই তারা আইনি পথে পদক্ষেপ নেবে। প্রাক্তন মন্ত্রী আবু সালেহ নজমুদ্দিন জনগণের মাঝে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এবং বলেন যে এই সিদ্ধান্ত জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে  উপস্থিত ছিলেন করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস মিডিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান শাহাদাত আহমদ চৌধুরী, জাকারিয়া আহমদ পান্না, আইনজীবী রিনা চক্রবর্তী, লক্ষ্মী দত্ত গুপ্ত, পঙ্কজ নাগ, ধ্রুবজ্যোতি দাস, নীরজ বিশ্বাস, একে দাবাদার, রাজা দত্ত বনিক, তন্ময় মজুমদার, অহিরঞ্জন দে, হোসেন চৌধুরী, শুভজিৎ চক্রবর্তী, সনু দাস প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *