যুবমন্থন জি২০ অনুষ্ঠান জামিরা হাইস্কুলে
বরাক তরঙ্গ, ৯ সেপ্টেম্বর : জামিরা হাইস্কুলে যুবমন্থন জি২০ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় নবম এবং দশম ছাত্র শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শনিবার। জনসমক্ষে কথা বলার কৌশল আয়ত্ত করা, কূটনৈতিক জ্ঞান এবং কৌশল রপ্ত করা এগলোই ছিল প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য। তাছাড়া মডেল জি-২০ অনুষ্ঠানে আজকের আলোচনার বিষয় স্থির করা হয় ”জলবায়ুর পরিবর্তন ঝুঁকি হ্রাস এবং বহনক্ষম উন্নয়ন একটি জীবন পন্থা’ শীর্ষক বিষয়ের উপর।
জি-২০ বিশ্ব সম্মেলনকে নকল হিসেবে উপস্থাপন করতেই জামিরা হাইস্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে জকের এই আয়োজন-যমনটি জানান বিদ্যালয় প্রধান। আজকের অনুষ্ঠানে বিশ্বের কুঁড়িটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, অর্থমন্ত্রী, প্রতিনিধি সহ স্পেন এবং বাংলাদেশ আমন্ত্রিত অতিথি দেশ হিসেবে অংশ নেয়। সম্মেলনে প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি অধ্যক্ষের ভূমিকা পালন করে ভারত এবং এই ভূমিকা পালন করে নবম শ্রেণীর পড়ুয়া মুস্তাক আহমেদ লস্কর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথি এবং বিচারক মণ্ডলীদের বরণ করে নেওয়া হয়। মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় মডেল ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ শাহনওয়াজ সানু। এর মধ্যে ছিলেন বিদ্যালয় পরিচালনা সমিতির সভাপতি আসাব উদ্দিন লস্কর, ১৮৩ বড় জামিরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাজেল হোসেন বড়ভূইয়া প্রমুখ। জি-২০ সম্মেলনের স্থায়ী অতিথি দেশ স্পেইনের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে ক্ষুদে পড়ুয়া শ্রীজা দেব।
শুরুতে সুফিয়ান সিদ্দিকী বড়ভূইয়া অনুষ্ঠানের নিয়ম কানুন বলে দেন। তিনি জানান অনুষ্ঠান পরিচালিত হবে দুটি ধারা বা ট্র্যাকে। এর একটি হচ্ছে ‘শেরপা ট্র্যাক’ এবং অপরটি ‘ফিনান্স ট্র্যাক’। শেরপা ট্র্যাকে অংশগ্রহন করবেন দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্যরা। তাদের আলোচ্য বিষয় থাকবে থিমের উপর সামগ্রিক আলোচনা, আন্তর্জাতিক বোঝাপড়া, সহযোগিতা সৌভ্রাতৃত্ব এবং বিশ্ব শান্তি এই সব বিষয়ের উপর। অপরদিকে ফিন্যান্স ট্র্যাকে যেসব সদস্য অংশগ্রহণ করবেন তারা হলেন বিভিন্ন দেশের অর্থমন্ত্রী, অর্থ সচিব এবং গভর্নরেরা। তাদের আলোচ্য বিষয় থাকবে জীবন ধারণের মানদন্ডের উন্নয়ন, জাতীয় আয়, দরিদ্রতা দূরীকরণ, বৈদেশিক ঋণ ও পলিসি নির্মাণ প্রভৃতি।
একটি মুহূর্তে সকলে দাঁড়িয়ে পড়েন এবং কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রীয় সংগীত বাজানো হয়। সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বক্তৃতার র। ভারতের প্রধান মন্ত্রী এতে অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের স্বাগত বক্তব্যের পর দুইটি ধারার প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য একে একে তুলে ধরেন। প্রত্যেকেই নিজ দেশের হয়ে আলোচনা উপস্থাপন করেন।যুক্তি ও পালটা যুক্তি দেন। সকলেরই একটি বিষয়ে সাধারন উদবীগ্নতা প্রকাশ পায়। সেটি হলো পৃথিবীর জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন। কীভাবে এর উন্নতি সম্ভব তার উপরও বেশ বিশ্লেষোন হয়। ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে বহনক্ষম উন্নয়নে এগিয়ে আসতে বিশ্বসমাজের প্রতি বিশেষ আবেদন উঠে আসে আজকের সম্মেলনে।
অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি ডাক্টার শাহনয়াজ তাঁর বক্তব্যে আওলচনার মূল বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের আদর্শ জীবন শৈলী উন্নয়নে জোর দেন। তিনি বলেন অধিক উন্নয়নের নামে আমরা পৃথিবীর প্রাকৃতিক সৌষ্ঠব ও সম্পদকে নষ্ট করে চলেছি। এই পৃথিবীর জল, মাটি, বায়ু ও পরিবেশের ক্ষতি না করে বস্তুর উৎপাদন ও ব্যবহার করতে হবে। প্লাস্টিকজাতীয় অক্ষয়ীষ্ণু পদার্থের ব্যবহার ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে থ্রি-আর নীতি মেনে চলতে আজ বিশ্বাবাসী বাধ্য। এতে পরিবেশ সংরক্ষনের সাথে সাথে মানুষের অপচয় কমে এবং আয় বাড়ে। ফলে যে উন্নয়ন আসে তা বহনক্ষম উন্নয়ন। ভিবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সম্পদ সংরক্ষন করা যায়। তাই সকলকে হতে হবে পরিবেশ সচেতন। তিনি বিকল্প শক্তির উৎসের ব্যবহারেও জোর দেন।
অনুষ্ঠানের শেষে বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শেরপা ট্র্যাকে প্রথম হয় যুক্ত্রাজ্যের প্রধান মন্ত্রী হিসাবে অবতীর্ণ হওয়া নবম শ্রেণি ছত্রী নাজিফা সিদ্দিকা বড়ভুইয়া, দ্বিতীয় ম্যাক্সিকোর প্রধান মন্ত্রী মারুফা তাসমিন লস্কর এবং তৃতীয় কানাডার প্রধান মন্ত্রী মার্জানা বেগম বড়ভুইয়া। ফিনান্স ট্র্যাকে প্রথম ইনোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী একরামুল হক বড়ভূইয়া, দ্বিতীয় ম্যাক্সিকোর প্রধান মন্ত্রী মারুফা তাসমিন লস্কর চৈনিক অর্থসচিব যত্নরাম রিয়াং এবং তৃতীয় হয়েছে ইতালির গভর্বেনর আরিফা বেগম। তাছাড়া সেরা দল হিসাবে পুরস্কার পায় ‘ওয়াই টুয়েন্টি’ দল। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন তাজেল হোসেন বড়ভুইয়া, এইচ বিবেক সিংহ, পুলকেশ দাস এবং মধুমিতা দেব।
উল্লেখ্য, ৯ সেপ্টেম্বর থেকে দিল্লিতে জি-২০ এর শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ বা ‘বসুদৈব কুটুম্বকম’।পৃথিবীর কুঁড়িটিরও অধিক দেশের কূটনীতিবিদরা, রাষ্ট্রপ্রধানেরা এবং অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরেরা আজ দিল্লিতে মিলিত হচ্ছেন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে।