কাছাড়ে শিক্ষার গৌরবময় সম্মাননা ও কৃতীদের সংবর্ধনায়

জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১৯ ফেব্রুয়ারি : শিক্ষার উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। বুধবার শিলচরের জিসি কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয় কাছাড় জেলা-স্তরের ‘সেরা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও মাতৃগোষ্ঠী পুরস্কার ২০২৪-২৫’ এবং ‘বিদ্যাঞ্জলি ২.০ জেলা-স্তরের পুরস্কার ২০২৪-২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠান। সামগ্রিক শিক্ষা, কাছাড়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত অন্তরা সেন, জেলা মিশন কো-অর্ডিনেটর ও সহকারী আয়ুক্ত  তথা তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় শিলচরের উপ সঞ্চালক, বহ্নিখা চেতিয়া সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

এই গৌরবময় আয়োজন ছিল কাছাড় জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখা স্কুল, শিক্ষক এবং সমাজকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমকে স্বীকৃতি জানানোর এক বিরল মুহূর্ত।অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব শিক্ষার সমাজ পরিবর্তনের ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া শিক্ষক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং সমাজের সচেতন সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একইসঙ্গে তিনি সকলকে আহ্বান জানান, কাছাড়ের প্রতিটি শিশুর জন্য মানসম্মত ও সার্বিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার।

কাছাড়ে শিক্ষার গৌরবময় সম্মাননা ও কৃতীদের সংবর্ধনায়

অনুষ্ঠানের অন্যতম হৃদয়স্পর্শী মুহূর্ত ছিল কটিগড়ার ১২৭টি সরকারি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বিশিষ্ট সমাজসেবী প্রণকিশোর দেব-এর ভাষণ। তার নিরলস প্রচেষ্টায় বহু স্কুলে ছাদ, পাখা, ডেস্ক, চেয়ার, মেঝের উন্নয়ন সহ নানা পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে।

কাছাড়ে শিক্ষার গৌরবময় সম্মাননা ও কৃতীদের সংবর্ধনায়

বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ শিশুরাই, তাই তাদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা পরিবেশ তৈরি করা আমাদের সবার দায়িত্ব। অপ্রতুল পরিকাঠামোর কারণে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় অসুবিধা হতে দেখেই আমার মনে হলো, আমি যদি কিছু করতে পারি, তবে সেই সুযোগ হাতছাড়া করব না। শিক্ষার প্রকৃত অর্থ শুধু বই-পড়া নয়, বরং একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা যেখানে শিশুরা নিরবচ্ছিন্নভাবে নিজেদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে পারে।” তার এই আত্মনিবেদনমূলক বক্তব্যে পুরো অডিটোরিয়াম করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।

কাছাড়ে শিক্ষার গৌরবময় সম্মাননা ও কৃতীদের সংবর্ধনায়

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলা কর্মসূচি আধিকারিক (কমিউনিটি পার্টিসিপেশন), এসএসএ, কাছাড় এবং আসাম রাজ্য বিদ্যালয় শিক্ষা পর্ষদ, বিভাগ-১, কাছাড়-এর আঞ্চলিক সম্পাদক ড. বিদ্যুৎ দেব চৌধুরী কাছাড় জেলার সকল বিদ্যালয়কে তামাকমুক্ত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, শীঘ্রই তামাকমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে একটি স্বাক্ষর অভিযান চালু করা হবে, যেখানে অভিভাবক, শিক্ষক ও ছাত্রসমাজ একত্র হয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করবে। পাশাপাশি, কাছাড় জেলায় শিক্ষার উন্নয়নে স্বেচ্ছায় অবদান রাখা সকল শুভানুধ্যায়ী ও সমাজসেবীদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কাছাড়ে শিক্ষার গৌরবময় সম্মাননা ও কৃতীদের সংবর্ধনায়

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রবীণ শিক্ষকদের নিরবিচারে অবদানকে সম্মান জানিয়ে, কাছাড় জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক গণেশ হরিজন জানান, অবসর গ্রহণের পরেও অনেক শিক্ষক শিক্ষার মহান ব্রত পালন করে চলেছেন, যা জেলার অ্যাকাডেমিক ভিত্তিকে দৃঢ় করে তুলছে। একইসঙ্গে জি.সি. কলেজের অধ্যক্ষ বিবাস দেব বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু ইট-পাথরের কাঠামো নয়, বরং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিচালনা কমিটির নিষ্ঠা ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এক মহৎ ক্ষেত্র।

কাছাড়ে শিক্ষার গৌরবময় সম্মাননা ও কৃতীদের সংবর্ধনায়

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে, জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও মাতৃগোষ্ঠীকে সম্মানিত করেন, যারা শিক্ষার প্রসারে অসাধারণ অবদান রেখেছেন। এই মহতি উদ্যোগ শুধুমাত্র পুরস্কার বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে কাছাড়ের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে।

Author

Spread the News