মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৩ ডিসেম্বর : বরাক উপত্যকায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। এরই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে করিমগঞ্জ শহরের একটি অভিজাত হোটেলে জেলা কংগ্রেসের উদ্যোগে এক গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আসাম প্রদেশ কংগ্রেসের ম্যানিফেস্টো কমিটির চেয়ারম্যান তথা লোকসভা সাংসদ প্রদ্যুৎ বরদলৈ। তাঁর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাপস পুরকায়স্থ এবং জেলা কংগ্রেসের মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান শাহাদাত আহমদ চৌধুরী।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাংসদ প্রদ্যুৎ বরদলৈ বিজেপি নেতৃত্বাধীন আসাম সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ শানান। তিনি বলেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বরাক উপত্যকার সার্বিক উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সেই রূপরেখা তৈরির লক্ষ্যেই তিনি গত চারদিন ধরে বরাক উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। করিমগঞ্জ সফরের পাশাপাশি তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যেমন মতবিনিময় করছেন, তেমনই সাধারণ মানুষের সমস্যাও সরাসরি শুনছেন। জনগণের মতামতকে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে অন্তর্ভুক্ত করাই দলের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।
বর্তমান রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বরদলই বলেন, “আজ অসমে প্রকৃত সরকার নেই, চলছে সিন্ডিকেট রাজ। আর এই সিন্ডিকেট ব্যবস্থার মূল কারিগর হচ্ছেন মন্ত্রী পীযুষ হাজরিকা।” তাঁর অভিযোগ, গোটা রাজ্যের প্রতিটি জেলায় সিন্ডিকেট চক্র গড়ে তোলা হয়েছে এবং বরাক উপত্যকায় এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মন্ত্রী কৌশিক রায়। তিনি আরও দাবি করেন, সম্প্রতি তিনসুকিয়া জেলায় কয়লা সিন্ডিকেট গঠন করা হয়েছে এবং শুধু কয়লাই নয়, ডিম, মাছ, পানসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি সামগ্রী আজ সিন্ডিকেটের কবলে। বরদলৈ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, বিজেপি সরকার আসার আগে যারা অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের জন্য সংগ্রাম করতেন, আজ তারাই কোটি কোটি টাকার দামী গাড়িতে চলাফেরা করছেন। এই হঠাৎ সম্পদের উৎস কোথায় এই প্রশ্নের উত্তর রাজ্যবাসী জানতে চায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বরাক উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে সাংসদ বলেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল, বিশুদ্ধ পানীয় জলের তীব্র সংকট রয়েছে এবং জেলায় জেলায় বেকার যুবক-যুবতীরা কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অথচ রাজ্যের মন্ত্রীরা এসব মৌলিক সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতেই ব্যস্ত বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জল জীবন মিশন প্রসঙ্গে বরদলৈ বলেন, এই প্রকল্প রাজ্যে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে এবং তা দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তাঁর দাবি, দুর্নীতির নিরিখে আজ অসম দেশজুড়ে শীর্ষস্থানে রয়েছে। গুগলে সার্চ করলেই দেখা যাবে, অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে ভারতের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—এমন মন্তব্যও করেন তিনি।
আগামী বিধানসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংসদ বরদলই দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, অসমের জনগণ পরিবর্তন চায় এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনেই সেই পরিবর্তনের সূচনা হবে। কংগ্রেস অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে স্বচ্ছতা, উন্নয়ন ও জনকল্যাণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি। সাংবাদিক সম্মেলনের শেষ পর্বে বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষকে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের শক্তিতেই পরিবর্তন সম্ভব, আর সেই পরিবর্তনের সূচনা হবে ২০২৬ সালেই।


