করিমগঞ্জ কংগ্রেসে পরিবারতন্ত্র, হাফিজের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে একাংশ নেতৃবৃন্দ

‘আমি কোনওদিনও আমার পরিবারের সদস্যদের কোনও পদের দায়িত্ব দিতে চাইনি’, জানালেন চৌধুরী

বরাক তরঙ্গ, ১৪ নভেম্বর : অসম প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি ও হাইকোর্টের বরিষ্ঠ আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দলীয় অন্দরে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে বারবার ব্যবহার করে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অভিযোগে ইতিমধ্যেই জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসে। দলীয় একাংশ মহলের দাবি সংগঠনকে ব্যবহার করে, সংখ্যালঘু সমাজের আবেগকে হাতিয়ার বানিয়ে, কৌশলে নিজের পরিবারের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে নিচ্ছেন তিনি। জেলা কংগ্রেস তার হাতের মুটায় রাখতে কৌশন চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু হয়েছে। কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবস্থায় জানান, হাফওজ রশিদ আজ যেভাবে প্রদেশ কংগ্রেসের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, তাতে করিমগঞ্জ কংগ্রেসের মূল কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম। তিনি সংখ্যালঘু সংগঠনগুলিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে সংখ্যালঘু সমাজের একমাত্র মুখ বানাতে চাইছেন।

করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের অভ্যন্তরে এখন অসন্তোষ চরমে। কেউ কেউ বলছেন, এইভাবে চলতে থাকলে ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে করিমগঞ্জ কংগ্রেসের ভয়াবহ ভরাডুবি অনিবার্য।

অভিযোগ, হাফিজ রশিদ নিজের পরিবারের সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দলীয় নীতি ও শৃঙ্খলাকে পদদলিত করছেন। তালিকা দীর্ঘ নিজের ভাই হোসেন আহমদ চৌধুরীকে করেছেন জেলা কংগ্রেসের এক্সিকিউটিভ মেম্বার।নিজের ভাগ্নে জামাইকে বসিয়েছেন ইয়ং ব্রিগেডের জেলা চেয়ারম্যান পদে।নিজের আপন ভাগ্নেকে বানিয়েছেন বদরপুর চৈতন্যনগর ব্লকের কংগ্রেস সভাপতি। নিজের ভাতিজাকে দিয়েছেন জেলা কংগ্রেসের শাখা সংগঠনের দায়িত্ব। আরেক ভাই রফিক আহমদ চৌধুরীকে উঠিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেসের মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের মিডিয়া প্যানেলিস্ট হিসেবে। নিজের শ্যালক দেওয়ান আব্দুল হাকিম চৌধুরী হয়েছেন করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। ইয়ং ব্রিগেড চেয়ারম্যান ভাগ্নে জামাই জাকির হোসেন চৌধুরী, বদরপুর চৈতন্যনগর ব্লক প্রেসিডেন্ট ভাগ্নে সেলিম কাজি, ভাতিজা জুনায়েদ চৌধুরী।

এই পারিবারিক প্রভাব বিস্তারের রাজনীতিতে ক্ষুব্ধ বহু প্রবীণ কংগ্রেস কর্মী ইতিমধ্যেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করছেন, করিমগঞ্জ কংগ্রেসে আজ গণতন্ত্র নয়, চলছে হাফিজতন্ত্র। মহল এখন একটাই প্রশ্ন করছে দল কি নীরবে দেখবে এক ব্যক্তির হাতে সংগঠনের এমন দখলদারিত্ব?

এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই করিমগঞ্জ কংগ্রেসে এক প্রকার অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিশ্রম করে আসা একাধিক সিনিয়র ও তরুণ দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সঞ্চার হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দলীয় ত্যাগী ও যোগ্য প্রার্থীদের উপেক্ষা করে, হাফেজ রশিদ নিজের পারিবারিক প্রভাব খাটিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের খেলায় মেতে উঠেছেন।

এ দিকে ইস্যুটি নিয়ে ‘বার্তালিপি’র তরফে হাফিজ রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এমন অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি কোনওদিনও আমার পরিবারের সদস্যদের কোনও পদের দায়িত্ব দিতে চাইনি। এমনকি জেলা কংগ্রেস সভাপতি তাপস পুরকায়স্থর সামনেও আমি এমনটা বলেছি। এরপরও প্রদেশ নেতৃত্ব তাদের বিভিন্ন পদে নিযুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া, আমার সহধর্মিণী গুয়াহাটি থাকেন। তিনি দায়িত্ব নিলে প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও পদে নেবেন। সেখানে শ্রীভূমি কংগ্রেসের সভানেত্রীর দায়িত্ব কেন নিতে যাবেন, মন্তব্য করেন হাফিজ রশিদ আহমদ চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *