তুঘলকি কাণ্ড! কাছাড়ের শতাধিক পরীক্ষার্থী রেজাল্ট সিটে অনুপস্থিত, হুলস্থুল
বরাক তরঙ্গ, ১০ মে : আজবকাণ্ড! পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় বসলেও অনুপস্থিত দেখানো হল। কাউন্সিলের এমন কর্মকাণ্ডে বহু পরীক্ষার্থীর খুশি অনেকটাই ম্লান হয়ে যায়। উচ্চমাধ্যমিকের এমন ফলাফলে অনেক পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উপর যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে ফল প্রকাশের পর এনিয়ে সৃষ্টি হয় হুলুস্থুলের। কীভাবে কী হলো তা জানতে, ওয়েবসাইট ঘেঁটে মার্কশিট দেখার পর বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে যায় আরও। দেখা যায় পরীক্ষার্থীদের অনেকেই নাকি অনুপস্থিত ছিল ইংরেজি সহ অন্যান্য কিছু বিষয়ের পরীক্ষায়। যদিও পরীক্ষা কেন্দ্রের অ্যাটেনডেন্স শিট-এ জ্বলজ্বল করে বহন করছে তাদের সেসব বিষয়ের পরীক্ষায় উপস্থিতির স্বাক্ষ্য।
পরীক্ষা দিয়েও অনুপস্থিতির গেরোয় অসফল তকমা জুটেছে শিলচরের ঐতিহ্যবাহী গুরুচরণ কলেজ, রামানুজ গুপ্ত জুনিয়র কলেজ, হোলিক্রস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ অন্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় শত পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে।
গুরুচরণ কলেজে এমন ঘটনার শিকার হয়েছে প্রায় ৬০ জন পরীক্ষার্থী। রামানুজ গুপ্ত জুনিয়র কলেজে ৩৬, হোলিক্রস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৯ এবং সরকারি বালিকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৬ জন। জেলা সদর শিলচর এর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও গ্রাম কাছাড়ের আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
গুরুচরণ কলেজের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ সেলের ইনচার্জ ডঃ জয়চন্দ্র সিং জানান, ওই কলেজের যেসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার পরও তাদের অনুপস্থিত বলে দেখানো হয়েছে এদের বেশিরভাগই বিজ্ঞান শাখার। কয়েকজন রয়েছে কলা শাখারও। তিনি জানান, এই পরীক্ষার্থীদের এ নিয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের ব্যাপারটা যাচাই করে দেখতে আবেদনপত্রগুলো পাঠানো হবে গুয়াহাটিতে অসম হায়ার সেকেন্ডারি এডুকেশন কাউন্সিল কর্তৃপক্ষের কাছে। তাঁর আশা, শীঘ্রই এর সুরাহা হবে।
রামানুজ জুনিয়র কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণদীপ চন্দ জানান, তাদের কলেজের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসে কাছাড় কলেজ কেন্দ্রের অধীনে। তারা ইতিমধ্যে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মারফত কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। ওই কলেজের যাদের অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে এরা সবাই বিজ্ঞান শাখার। এর মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক মেধা তালিকায় স্থান অর্জনকারী বিশ্বদীপ নাথও। পূর্ণদীপবাবু উদ্বেগ ব্যক্ত করে বলেন, এমন কিছু পরীক্ষার্থী এই গেরোয় ফেঁসে অসফল তালিকায় চলে গেছে যাদের অন্যান্য বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর ৯০ শতাংশের উপরে। আর ইংরেজি বিষয়েও এদের সমান অনুপাতে নম্বর পাওয়ার কথা। হোলিক্রস উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সিস্টার টেরেসা জানান, ওই স্কুলের যে ২৯ জন পরীক্ষা দেওয়া সত্বেও অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে এরা সবাইও বিজ্ঞান শাখার। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিভাস চক্রবর্তী জানান, তাঁর স্কুলে যে ৬ জন পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছে এরা সবাই কলা শাখার। তবে ইংরেজি নয়, এদের কারো অর্থনীতি কারও বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের লিখিত পরীক্ষায় কোনও নম্বর নেই। কারো ক্ষেত্রে আবার ব্যাপারটা ঘটেছে প্রজেক্ট নিয়ে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে নম্বর না দেওয়া হলেও অনুপস্থিত বলেও উল্লেখ করা হয়নি মার্কশিটে। প্রাপ্ত নম্বরের জায়গাটা পুরো খালি রেখে দেওয়া হয়েছে। অধরচাঁদ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলেও দু’জন পরীক্ষার্থীর একই হাল।