মোহাম্মদ জনি, শ্রীভূমি।
বরাক তরঙ্গ, ২৯ নভেম্বর : স্বাধীনতার ৭৮ বছর পার হলেও যাতায়াতের ন্যূনতম সুবিধা থেকেও বঞ্চিত রামকৃষ্ণনগর সমজেলার দুল্লভছড়া–ফেটিপাত অঞ্চলের বাসিন্দারা। সময় বদলেছে, দেশ এগিয়েছে, প্রযুক্তি আধুনিক হয়েছে কিন্তু যেন সময় থমকে আছে সিংলা নদীর পাড়ের এই তিন-চারটি গ্রামজুড়ে।
এলাকার মানুষের ভরসা আজও একটি অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো। বন্যার জল এলেই ভেসে যায় সাঁকোটি, আর ভেসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়ে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন ও নিত্যদিনের জীবনযাত্রা। নদীর উপর পাকা সেতু না থাকায় হাজারো মানুষকে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় এই অস্থায়ী পথ। ভোরে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা, কর্মজীবী মানুষ, রোগী ও বৃদ্ধ—সবারই জীবনে রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয় নিয়ে চলাচল করা।
প্রতি বছর শুকনো মরসুমে গ্রামের মানুষ নিজেরাই চাঁদা তুলে, নিজেদের শ্রমে তৈরি করেন এই সাঁকো। এই সাঁকো ভেসে গেলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও বাজারের সঙ্গে যোগাযোগ। জরুরি মুহূর্তে অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিতে পারাও হয়ে দাঁড়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় নদীর তীরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও পথ থাকে না স্বজনদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ স্বাধীনতার পর থেকে কত সরকার বদলেছে, নেতা–মন্ত্রীর পালাবদল হয়েছে, উন্নয়নের বড় বড় প্রতিশ্রুতি শোনা গেছে, কিন্তু এই এলাকার যাতায়াত সমস্যার সমাধানে কারও বাস্তবিক নজর পড়েনি। সিংলা নদীর উপর একটি মজবুত পাকা সেতু নির্মাণ বহুদিনের দাবি হলেও তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
গ্রামবাসী জানান, এই নদীর উপর সেতুটি হলে তারা মূল সড়কের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন, উন্নয়ন পৌঁছাবে ঘরে ঘরে, বাড়বে কর্মসংস্থান, রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হবে, শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি কমবে—তাদের জীবনযাত্রায় আসবে বহুল প্রত্যাশিত পরিবর্তন।
এই জনদুর্ভোগে বিরক্ত ও হতাশ গ্রামবাসীরা সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে বিধায়ক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তাদের একটাই অনুরোধ— “আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা, আমাদের জীবনযাত্রার স্বচ্ছন্দতা আর উন্নয়নের স্বার্থে এই স্থানে একটি স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণ করা হোক।
স্বাধীনতার আট দশক পরও যখন উন্নয়নের আলো এই অঞ্চলের মানুষের কাছে পুরোপুরি পৌঁছায়নি, তখন প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তাদের এই দাবি কতটা জরুরি তা ভাবার সময় এসেছে।


