সীমান্তের ঘাড়মুড়ায় প্রত্নতাত্বিক রত্ন ভাণ্ডারের খোঁজ পেলেন ড. গণেশ নন্দী

বরাক তরঙ্গ, ১০ ডিসেম্বর : দক্ষিণ হাইলাকান্দির অসম-মিজোরাম সীমান্তের ঘাড়মুড়ার জঙ্গলে আকস্মিকভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে এক জঙ্গলাকীর্ণ ভাস্কর্যের পাহাড়। এই প্রত্নতাত্বিক রত্ন ভাণ্ডারের খোঁজ পেয়েছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. গণেশ নন্দী এবং তার একসময়ের গবেষক ছাত্র ড. বিনয় পাল। এই আবিষ্কারকে ঘিরে সব মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রাচীন ভাস্কর্যগুলি এ অঞ্চলের ইতিহাসে নয়া সংযোজনের হাতছানি দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত করছে বরাক উপত্যকার সমতল ও পাহাড়ে অন্তত দেড় হাজার বছরের জনবসতির কথাটিও। এই বিষয়কে নিয়ে এবার আগ্রহ দেখাচ্ছে দেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগও। খুব শীঘ্রই বিভাগের এক প্রত্নতাত্ত্বিক প্রতিনিধি দল এ অঞ্চলে আসার সম্ভাবনা।

ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের কাছে গণেশ নন্দী ও বিনয় পাল জানান, দক্ষিণ হাইলাকান্দির অসম-মিজোরাম সীমান্তে রিয়াং জনজাতি অধ্যুষিত কোলালিয়ান গ্রাম। সেখানে ‘শিব্রাই তীথোস্থান’ (স্থানীয় ভাষায়) অর্থাৎ শৈবতীর্থে শিব- পার্বতী বছরের পর বছর ধরে পূজিত হচ্ছেন। এছাড়াও বেলে পাথরের পাহাড়ে প্রচুর দেব-দেবী বা অন্যান্য ভাস্কর্য খোদিত রয়েছে। কিন্তু এসব ভাস্কর্যের নির্মাণ ও গঠনশৈলীর সঙ্গে পাল ও গুপ্ত ভাস্কর্যশৈলীর প্রভাব রয়েছে। এই ভাস্কর্য গুলির সঙ্গে সাজুজ্য রয়েছে ত্রিপুরার ঊনকোটি এবং পিলাক থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন ভাস্কর্যের যেগুলি সহস্রাধিক  বছরের পুরনো। ভূবন পাহাড়ে পাওয়া ভাস্কর্যের সঙ্গেও কিছুটা মিল রয়েছে। একসময় এসব অঞ্চল সমস্তটাই ছিল প্রাচীন ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে। প্রাচীন ত্রিপুরার ইতিহাসে দক্ষিণ হাইলাকান্দি- মিজোরামের কিছু অংশ নিয়ে রিয়াং জনবসতি এবং বিভিন্ন ঘটনাবলীর উল্লেখও রয়েছে। যার জন্য ত্রিপুরার ঊনকোটি, পিলাক, দক্ষিণ হাইলাকান্দি এবং ভুবন পাহাড়ের প্রাপ্ত ভাস্কর্যের মধ্যে বিরাট একটা সংযোগের সম্ভাবনা রয়েছে। বরাক উপত্যকায় যে দেড় হাজার বছর আগেও উন্নত জনবসতি ছিল এসব উন্নত মূর্তি শিল্প সে কথাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সে সম্ভাবনার কথাও তারা উল্লেখ করেন।    

সীমান্তের ঘাড়মুড়ায় প্রত্নতাত্বিক রত্ন ভাণ্ডারের খোঁজ পেলেন ড. গণেশ নন্দী

স্বাভাবিকভাবেই সব মহলেই এই আবিষ্কার ঘিরে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে মিজো-রিয়াং সম্পর্কের অবনতির ফলে ওই মূর্তিগুলোর উপর একাধিকবার দুষ্কৃতী হামলা হয়েছে। বোমা মেরে বেশিরভাগই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট যা আছে তা অবিলম্বে সংরক্ষণ এবং সুরক্ষিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এই তাগিদ থেকে পুরাতত্ত্ব বিভাগে চিঠি লিখেছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তথা উত্তর পূর্বের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. জয়ন্ত ভূষণ ভট্টাচার্য। পুরাতত্ত্ব বিভাগের অ্যডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল ড: অলক ত্রিপাঠীর সঙ্গে এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলেছেন গণেশ নন্দী । ত্রিপাঠী ভাস্কর্যের এবং জায়গার ছবি, অবস্থানসহ বিস্তারিত চেয়ে পাঠান। কথামতো ড. নন্দী সব পাঠালে ত্রিপাঠি উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করে বলেছেন যে বিষয়টা সত্যিই ভাবনার। ভালো করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। খুব শীঘ্রই তিনি বিভাগের এক প্রতিনিধি দল পাঠাবেন যারা কোলালিয়ানে গিয়ে সরে জমিনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু করবেন এবং পরবর্তী প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

Author

Spread the News