জনসংযোগ, শিলচর।
বরাক তরঙ্গ, ১০ ডিসেম্বর : জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, আইএএস–এর নেতৃত্বে কাছাড় জেলা প্রশাসন বুধবার গভীর শ্রদ্ধা ও দেশপ্রেমের আবেগে শহিদ দিবস পালন করে। সকালে সকাল ১১টা থেকে কাছাড় জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নতুন সম্মেলন কক্ষে গুয়াহাটি থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত রাজ্যস্তরের শহিদ দিবস কর্মসূচি প্রদর্শনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।
এদিন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে জেলা আয়ুক্তের কার্যালয় প্রাঙ্গণে জেলা পর্যায়ের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেখানে জেলার বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিক, কর্মচারী, শিল্পী, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে আসু আন্দোলনে আত্মবলিদান দেওয়া ৮৬০ জন শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাদের মহান আত্মত্যাগ আজও প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। কর্মসূচিটি আসামের পরিচয় ও অখণ্ডতা রক্ষায় প্রাণ উৎসর্গকারী শহিদদের প্রতি কাছাড় জেলার অটুট সংহতি ও সম্মানের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিলচর বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী, কাছাড় জেলা পরিষদের মুখ্য কার্যর্বাহী আধিকারিক প্রণব কুমার বরা, সহকারী আয়ুক্ত অঞ্জলি কুমারী, সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত উপ সঞ্চালক তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয় শিলচর দীপা দাস, সাংস্কৃতিক পরিক্রমা বিভাগের আধিকারিক, স্নেহাংশু রায় সহ বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক ও কর্মচারীবৃন্দ।

শিলচরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শিল্পীরাও এদিনের স্মরণসভায় অংশগ্রহণ করেন। জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের কর্মী ও স্কুল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা সম্মিলিতভাবে ভারতরত্ন ড. ভূপেন হাজারিকার অমর সৃষ্টি “শহিদ প্ৰণামো তোমাক” পরিবেশন করেন। তাদের সম্মিলিত সুরেলা নিবেদন পুরো অনুষ্ঠানে এক আবেগময় পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং শহিদদের প্রতি সঙ্গীতময় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে।
উদ্দীপনামূলক ভাষণে শিলচর বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী আসু আন্দোলনের শহিদদের অসীম সাহসের কথা স্মরণ করেন। তিনি জানান, এই আন্দোলন কেবল একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় নয়, বরং আসামের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। তিনি বলেন, ৮৬০ জন শহিদের আত্মত্যাগ আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি ও ভাষাগত গৌরব রক্ষার মূল্য স্মরণ করিয়ে দেয়। তিনি যুব সম্প্রদায়কে ঐক্য, দায়িত্ববোধ এবং রাজ্যের উন্নতির প্রতি সদা নিবেদিত থাকার আহ্বান জানান।

এর আগে কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত, মৃদুল যাদব এক বিস্তৃত ও চিন্তাশীল বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে যদিও আসু আন্দোলনে কাছাড় জেলার কোনো ব্যক্তি শহীদ হননি, তবুও আসামের প্রতিটি অংশের সঙ্গে এই জেলা আবেগে ও সংস্কৃতিতে অটুটভাবে যুক্ত। তিনি বলেন, শহিদ দিবস শুধুমাত্র একটি বার্ষিক আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি রাজ্যের মর্যাদা রক্ষা করতে আত্মোৎসর্গকারী শহিদদের প্রতি এক নৈতিক স্মরণ।
জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব বরাগাঁওস্থিত শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে উপস্থিত হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জেলার সকল বাসিন্দাকে আহ্বান জানান এবং একে স্মৃতিচারণার তীর্থযাত্রা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্ব শান্তি রক্ষা, সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং শহিদের আদর্শকে ধারণ করে এগিয়ে চলা। তিনি জানান, শহীদদের অবদান সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ও তরুণ প্রজন্মকে অসমের ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন সদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।


