বরাক তরঙ্গ, ২৭ ডিসেম্বর : ডিজিটাল অ্যারেস্ট প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়েছেন যোরহাটের এক বিশিষ্ট চিকিৎসক। এই প্রতারণা চক্র যোরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের মানবদরদি চিকিৎসক সদাগর দেউরীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট কার্যত খালি করে দেয়। প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।
হঠাৎ ১৯ নভেম্বর চিকিৎসক সদাগর দেউরীর মোবাইল ফোনে আসা একটি ভিডিও কলই সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। অন্যান্য ঘটনার মতোই ডিজিটাল অ্যারেস্ট প্রতারণা চক্র কৌশলে বিশিষ্ট এই চিকিৎসককে ব্ল্যাকমেইলের জালে বন্দি করে। প্রথমে পুলিশ ও আইনজীবীর পোশাক পরে নিজেদের জ্যেষ্ঠ পুলিশ আধিকারিক ও আইনজীবী পরিচয় দিয়ে প্রতারণা চক্র চিকিৎসকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের রয়েছে বলে হুমকি দেয়।
নিজেকে বেঙ্গালুরু পুলিশের উপ-পরিদর্শক শিবপ্রসাদ পরিচয় দিয়ে ভুয়া ওই পুলিশ আধিকারিক জানান, অনলাইনে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনার কারণে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মোট ১৭টি মামলা দায়ের রয়েছে এবং এ বিষয়ে তাকে বেঙ্গালুরুর একটি থানায় হাজির হতে হবে। অত্যন্ত পেশাদার কৌশলে প্রতারণা চক্রের প্ররোচনায় পড়ে সহজ-সরল এই চিকিৎসক পুরো বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে ঘটে যেতে পারে—এমন কিছু ঘটনাকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে তুলে ধরে চিকিৎসককে বিশ্বাস করানো হয়। এরপর গ্রেফতার করার হুমকি দিয়ে ধারাবাহিকভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করতে থাকে প্রতারণা চক্র। এভাবে ভয় ও চাপের মুখে পড়ে চিকিৎসক সদাগর দেউরী প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। অনেক দেরিতে তিনি পুরো ঘটনার কথা পুলিশকে জানান।
ইতিমধ্যে ভুক্তভোগী চিকিৎসক প্রতারণা চক্রের যেসব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে, সেই অ্যাকাউন্ট নম্বর, মোবাইল নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। নিজের উপার্জনের বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে অসহায় মানুষের সেবায় ব্যয় করে আসা চিকিৎসক সদাগর দেউরীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সবাই পুলিশকে যে কোনও উপায়ে প্রতারণা চক্রের হাতিয়ে নেওয়া অর্থ উদ্ধার করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই ঘটনা আবারও সকলের জন্য একটি বড় সতর্কবার্তা হয়ে উঠেছে। অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোন কল বা ভিডিও কলে সাড়া না দেওয়াই শ্রেয়। কারণ পুলিশ বা কোনও তদন্তকারী সংস্থা কখনও ভিডিও কলের মাধ্যমে মামলা মীমাংসা করে না। ডিজিটাল অ্যারেস্টের নামে এ ধরনের প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকতে পুলিশ সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান


