ধলাই দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি, প্রতিমা গড়া থেকে মণ্ডপ নির্মাণ, গ্রামজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ

দিলোয়ার বড়ভূইয়া, ধলাই।
বরাক তরঙ্গ, ২৮ সেপ্টেম্বর : ধলাই সমজেলায় শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। প্রকৃতির প্রতিকূলতা, টানা গরমের মধ্যে, আর্থিক টানাপোড়েন সব বাধা উপেক্ষা করে প্রতিমা ও মণ্ডপ নির্মাণের কাজ চলছে জোরকদমে। ধলাই বাজার থেকে শুরু করে পালংঘাট, অমড়াঘাট, দর্মি সবখানেই এখন উৎসবের রঙ ছড়িয়ে পড়েছে। ধলাই পানিভরা দিন-রাত এক করে প্রতিমা গড়ছেন শিল্পীরা, পানিভরা মা কালী শিল্পালয়ে চলছে চোখধাঁধানো দুর্গা প্রতিমা নির্মাণ। পশ্চিমবঙ্গের পাঁচজন অভিজ্ঞ মৃৎশিল্পী গত তিন মাস ধরে এখানে অবস্থান করছেন। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত একনাগাড়ে মাটি, বাঁশ, খড়, কাপড় আর রঙের ছোঁয়ায় তাঁরা ফুটিয়ে তুলছেন মা দুর্গা ও তাঁর পরিবারকে। শিল্পীরা জানালেন, এবছর মোট ২৭টি প্রতিমা গড়েছেন তারা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার টাকার প্রতিমা রয়েছে। ধলাই ছাড়াও হাওয়াইথাং, ভাগা, আমড়াঘাট সহ আশপাশের বহু মণ্ডপে তাঁদের তৈরি প্রতিমা যাবে। এক শিল্পী জানান “কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। রঙ, বাঁশ, কাপড় সব কিছুর দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ। তাই প্রতিমা বানিয়ে লাভপ্রায় নেই বললে চলে। কিন্তু দুর্গোৎসব মানেই আমাদের জীবনের বড় উৎসব এই আনন্দ আর ভক্তির টানেই আমরা দিনরাত এক করে কাজ করছি।”

এদিকে টানা গরমের কারণে কাজের গতি অনেক সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়। বিদ্যুতের সমস্যাও আছে। কিন্তু সেসব কোনও কিছুই শিল্পীদের থামিয়ে রাখতে পারেনি। প্রতিটি প্রতিমায় তাঁরা প্রাণ ঢেলে কাজ করছেন। মাটির গায়ে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার রূপ, সিংহের ভয়ঙ্কর ভঙ্গি, অসুরের কাহিনি আর মহিষাসুরমর্দিনীর আবহ। ধলাই বিধানসভা কেন্দ্রে নানা পুজো কমিটি এখন ব্যস্ত মণ্ডপ সাজাতে। বাঁশ-কাঠের কাঠামোয় কাপড়ের আস্তরণ, থার্মোকল ও রঙিন আলোয় রাতদিন কাজ চলছে। আলোকসজ্জার ঝলকানি যেন শহরকে নতুন সাজে সাজিয়ে তুলছে। এক পুজো কমিটির সদস্য বলেন, এবার আমরা দর্শনার্থীদের জন্য থিম মণ্ডপ তৈরি করছি। আবহাওয়া নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা থাকলেও আমাদের কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। কৃষ্ণপুরের মানুষ এবছর এক নতুন মণ্ডপ দেখবেন।”

মণ্ডপের কাজ কিংবা প্রতিমা গড়ার দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই মানুষ ভিড় করছেন শিল্পালয়ে। শিশুরা মুগ্ধ চোখে প্রতিমার গড়ন দেখছে, বড়রা শিল্পীদের সঙ্গে গল্পে মেতে উঠছেন। পূজার দিনগুলোতে এই ভিড় আরও বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন উদ্যোক্তারা। দুর্গাপুজো এখন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক সামাজিক উৎসব। প্রতিমা গড়া থেকে মণ্ডপ সাজানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে সামাজিক উদ্যোগ সব মিলিয়ে এক অনন্য আবহ তৈরি হয়। এই উৎসবেই মানুষ ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হন। এক প্রবীণ নাগরিক বলেন, দুর্গোৎসব আমাদের সবার উৎসব। আমরা সারা বছর এই কয়েকটা দিনের অপেক্ষায় থাকি। এবছর গ্রাম অঞ্চল আরও বড় আয়োজনের সাক্ষী হবে। প্রকৃতির প্রতিকূলতা, আর্থিক সংকট কিংবা অবিরাম বৃষ্টি কোনও বাধাই ধলাই এর মানুষের উৎসাহে ভাটা ফেলতে পারেনি। শিল্পীদের হাতের কারুকাজ আর উদ্যোক্তাদের পরিশ্রম মিলে ধলাই আজ দুর্গামায়ের আগমনী বার্তায় মুখর। শীগ্রই মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিধ্বনিত হবে ঢাকের বাদ্য, আলোর রোশনাই আর ভক্তির সুর।
